সুদীপ দাস , ১৭ ডিসেম্বর:- ঠিকই শুনেছেন, একেবারেই কোনো সিনেমার গল্প নয়, মহামারীকালে ঘটে যাওয়া একাধিক আশ্চর্য ঘটনার মধ্যে এটিও একটি। নবদ্বীপের প্রফুল্ল নগরের নিবাসী শ্যামল রায় (৫১) ও তার স্ত্রী রুমা রায় (৪২) গত মাসের ২৮ তারিখ আক্রান্ত হন এই করোনা মহামারীতে। শ্যামল বাবু একরকম আসিম্পটমেটিক হওয়ায়, তার সমস্যা না হলেও তার স্ত্রী রুমা দেবী হয়ে পড়েন গুরুতর অসুস্থ। নিজের জেলায় একাধিক হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়েও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়, গঙ্গা পেরিয়ে চুঁচুড়ার অজন্তা সেবাসদনে নিজের স্ত্রীকে ভর্তি করান তিনি। তার প্রাথমিক চিকিৎসা করেই চিকিৎসক জানিয়ে দেন, দেহে সংক্রামণের মাত্রা ৯৫%, এবং অক্সিজেন লেভেল ৫৪%। তাই একরকম সব আশা ছেড়ে দিতে বলেই চিকিৎসা শুরু হয় রুমা দেবীর। মন শক্ত করতে বলে,ডাক্তারবাবুরা জানান তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। নিজের স্ত্রীয়ের এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো ভেঙে পড়েন শ্যামল বাবু ও তার পরিবার। কিন্তু অসম্ভব হলেও কিছুদিনের চিকিৎসার পরই দেখা যায় সোনালী রেখা, চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতার দিকে ফিরে আসেন রুমা দেবী। করোনার সাথে এই যুদ্ধে ডাক্তারবাবুদের অক্লান্ত পরিশ্রম, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় আজ সেই করোনাকে জয় করে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন রুমা দেবী।
কিন্তু এটা শুধু ঘরে ফেরার কাহিনী হতে পারতো না, যেখানে সব আশাই নিরাশায় পরিণত হয়েছিল, হারিয়েছিল আস্থা, সেখান থেকেই এই পুনর্জন্মের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে, হাসপাতালের মধ্যেই পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন করোনাজয়ী এই দম্পতি। এর পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য সামান্য বিবাহ ভোজেরও আয়োজন ছিল আজ। করোনা জয় ও বিবাহ পর্ব মিটিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন রুমা দেবী। এই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে, তার স্বামী শ্যামল বাবু জানান, তারা সব আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু তারপরও যেভাবে এই হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা চিকিৎসা করে তার স্ত্রীর প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাদের অবদান তিনি মুখে বলে ব্যক্ত করতে পারবেন না। শুধু একটাই ক্ষোভ ঝরে পড়ছে তার গলায়, যে এখানে আসার পূর্বেও তিনি দুটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন স্ত্রীকে, কিন্তু সেখানের চিকিৎসা ব্যাবস্থা হাতে যদি স্ত্রীকে ছেড়ে দিতেন তিনি, তাহলে হয়তো এইদিনের সাক্ষী তিনি হতে পারতেন না। অপরদিকে রুমা দেবীকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশি চিকিৎসক থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই-ই, তারা জানিয়েছেন শুরুতে বিষয়টা মুশকিল মনে হলেও, ধীরে ধীরে চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেন তিনি, এবং তারপর আস্তে আস্তে সব বাধা কাটিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়।