এই মুহূর্তে কলকাতা

শুভেন্দুকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে , শুভেন্দুর অনেক অজানা কথা সোজাসাপটায়।

কলকাতা , ১৪ ডিসেম্বর:- ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের আগেই রাজ্য রাজনীতিতে গুঞ্জনের নাম শুভেন্দু অধিকারী। হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন। এক সময় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান ভরসা ছিল শুভেন্দুর কাঁধে।লোকসভা ভোটের পর জঙ্গলমহলে একের পরে এক পার্টি অফিস দখল পরে পুনরুদ্ধার করা যার উপর দায়িত্ব স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন তিনি হলেন শুভেন্দু অধিকারী। এমন কি হলো যে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ ক্ষোভ, অভিমানের শিকার হতে হয়েছে। আসুন একটু জেনে নেয়া যাক কে এই শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যে রাজনীতিতে আসার মূল ঘটনা কি??? ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি, সেখান থেকে দিল্লির অলিন্দে— এক ঝলকে শুভেন্দুর যাত্রাপথ, নন্দীগ্রাম তৃণমূলের ক্ষমতায় উত্থানের অন্যতম ভিত্তিভূমি। শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক জীবনের টার্নিং পয়েন্টও সেই নন্দীগ্রাম। পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকারী পরিবারের দাপট সন্দেহাতীত। আর নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর একাধিপত্য নিয়েও কারোর মনে কোনও সন্দেহ নেই। পঞ্চাশের কোঠায় বয়স ১৫/১২/১৯৭০। ধ্যান-জ্ঞান-পরিবার বলতে একটাই, রাজনীতি। কথায় বার্তায় এখনও মেঠো ছাপ, কিন্তু, তাঁর নাম অনেকদিন আগেই পৌঁছে গেছে দিল্লির অলিন্দেও। দিল্লির বহু তাবড় নেতার মুখেও, এখন শুভেন্দুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা। আর হবেই বা না কেন, পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে গত ৩ দশক ধরে অধিকারী পরিবারের রমরমা সন্দেহাতীত।

আর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর শুভেন্দু কার্যত হয়ে ওঠেন বঙ্গ রাজনীতির অরণ্যদেব! তাঁকে ঘিরে নানা গল্প, নানা মিথ। আটের দশকের শেষপর্বে কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজে ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি শুভেন্দুর। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের হয়ে শুভেন্দুর রাজনৈতিক জীবনের শুরু।১৯৯৫ সালে কাঁথি পুরসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে কাউন্সিলর হন শুভেন্দু। ২০০১ সালে মুগবেড়িয়া বিধানসভা কেন্দ্রে শুভেন্দুকে প্রার্থী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তিনি তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দের কাছে হেরে যান। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রে সিপিএম লক্ষ্মণ শেঠের কাছে পরাজিত হন শুভেন্দু। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্র থেকে প্রথমবার জিতে বিধায়ক হন শুভেন্দু অধিকারী। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রটি মেজ ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে শিশির এগরায় প্রার্থী হন। জেতেন দু’জনেই। প্রথম বার বিধায়ক হন শুভেন্দু। ২০০৭ সালের নন্দীগ্রাম আন্দোলন শুভেন্দুর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠে অধিকারী পরিবারের মেজ ছেলে! গোটা রাজ্য তাঁর নাম জানতে শুরু করে।তৃণমূল ক্ষমতায় আসার ৩ বছর আগে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথমবার কোনও জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। আর সেটা ছিল শুভেন্দুর গড় পূর্ব মেদিনীপুর। এরইসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনাও দখল করে তৃণমূল। সেখানেও প্রচার করেছিলেন শুভেন্দু। ২০০৮ সালেই মদন মিত্রকে সরিয়ে শুভেন্দুকে যুব তৃণমূলের সভাপতি করেন মমতা। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে তমলুকে লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে প্রথম বার সাংসদ হন শুভেন্দু।

তার আগে ২০০৬ সালে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান পদে বাবার জায়গায় বসেন শুভেন্দু। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ফের পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি তমলুক কেন্দ্রে জেতেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, তাঁকে যুব তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে সৌমিত্র খাঁকে বসানো হয়। যে সৌমিত্র খাঁ এখন বিজেপি সাংসদ। সেইসময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘যুবা’ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে। সেই প্রথম দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি শুভেন্দুর ক্ষোভের খবর প্রথম সামনে আসে। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে জয়ী হন শুভেন্দু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় পরিবহণমন্ত্রী করা হয় তাঁকে। এবং পাঁচ পাঁচটি জেলার পর্যবেক্ষক হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী কে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যবেক্ষক পদ পাওয়ার পর মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। একের পর এক কংগ্রেস সিপিএম থেকে বিধায়ক কে তৃণমূলে যোগদান করার একমাত্র কারিগর ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মুর্শিদাবাদের পর্যবেক্ষক হয়ে দুটি লোকসভার কেন্দ্র তৃণমূলের হাতে তুলে দেন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূলের ফল ভাল না হওয়ায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে শুভেন্দুকে সরানো হয়।

এরপর হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রী পর্যবেক্ষক পদ টাই তুলে দেয়। এবং রাজ্যে একটি স্টানিং কমিটি গঠন করেন সেখানে স্থান পায় শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু তারপর থেকেই চলে অভিমানের পর্ব।২০২০-র অগস্টে তৃণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের দায়িত্ব থেকে সরানো হয় শুভেন্দুকে। তখন একাধিক জেলার দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরির জল্পনা জোরাল হয়। হলদিয়া এবং হুগলির উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। অবশেষে শুভেন্দু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, শুভেন্দুর ভবিষ্যত পদক্ষেপের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করছে বিধানসভা ভোটের সমীকরণ।

করে ঠিক সেরকমই এই আসন্ন ভোট যুদ্ধে দল বদলের খেলা মুখে সহজে বললেও আদপে এটা খুব সহজ পদ্ধতি নয় বিশেষ করে হেভিওয়েট মানুষজনের। খুব সহজ ছিলো না অংকটা। হিসেবটা চলছে কিন্তু গত আট মাস ধরে। সুসংগঠক তরুণ তুর্কি এবং জননেতা শুভেন্দু অধিকারীর আবেগ, ভালোবাসা এবং স্বত্তাকে কিন্তু ধাক্কা দিয়েছে সেই ২০১৫ থেকেই। মনে করে দেখা যায় বারে বারেই আঘাত এসেছে তাঁর উপর।সহ্য শক্তিও ক্ষয় হয়েছে এই কারণেই। তৃণমূল দলের আরেক প্রতিষ্ঠা পুরুষ মুকুল রায় দল বদল করে বর্তমানে বি জি পি র শীর্ষ নেতৃত্বে যদিও তার দল বদলের সময় কিন্তু এত আলোচনা হয়নি যতটা এই কয়েক মাসে শুভেন্দু কে নিয়ে হচ্ছে। রাজ্য রাজনীতি দেখছে একটা নুতুন অধ্যায়। জেলায় জেলায় বা নেট দুনিয়ায় দাদার অনুগামী দের ভীড়। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের অসংলগ্ন মন্ত্যব্য তাঁরই দলের নেতারা বিরুদ্ধে। বি জে পি র সেই আহ্বান “ভাগ মুকুল ভাগ ”বলা হলেও সেই মুকুল কিন্তু শেষ ভাগ বসিয়ে নিয়েছে তার সম জায়গায় ।আজ তিনি এক কেন্দ্রীয় দলের শীর্ষে বিরাজমান।

বঙ্গ বিজেপি ব্রিগেড তৈরী করতে লাগবে বেশ কিছু সুসংগঠক আর সচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ। সেই তালিকায় প্রথম নাম শুভেন্দুর। দীর্ঘ ৫বছরের নানা ওঠা নামাতে ক্লান্ত এবং গত কয়েক মাসে সেটা তীব্র আকার ধারণ করায় হয়তো দলবদলের পথ বেছে নিচ্ছেন শুভেন্দু। নানা সভা করে তাঁর ফ্লাগবিয়ারের অংকটা কষে নিয়েছেন দুঁদে রাজনীতিবিদ তার সঙ্গে তাঁর বিশেষ অনুগামী রাও একটা তালিকা তৈরী করে নিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংগঠক দের কে বা কারা তাঁর মতের সাথে একমত। অর্থাৎ গত আট মাস ধরে এই হোমওয়ার্ক করে গেছে তার অতি অনুগামী রা। ওপর দিকে তারই তৈরী ছেলেরা সমান ভাবে সুকৌশল প্রচার চালিয়ে গেছে নেট দুনিয়ায় বা সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং তাদের প্রতিভা লক্ষ্য করা গেছিলো খড়্গপুর উপ নির্বাচনে। শুভেন্দু কার্যত একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তখনই বহু ভোট স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং এজেন্সি দের। এরপর তাঁর ভাবমূর্তি এবং নির্ভীক পথ প্রদর্শক এর তকমায় সাড়া দিয়ে সেচ্ছায় অনুগামীর কার্যালয় খুলে ফেলছে জেলায় জেলায়।বিষয়টা গোপনে থাকলেও এখন কিন্তু প্রকাশ্যেই।

তথ্যের প্রকাশ গতকাল শনিবার রাত ৯টা নাগাদ এক গোপন বৈঠকে কেন্দ্রীয় দলের দিকে যাবার ই সীলমোহর দিয়েছেন শুভেন্দু অধীকারী। তাঁর সাথে পথ চলার অঙ্গীকার বদ্ধ তৃণমূলের বেশ কিছু শীর্ষ নেতৃত্ব ,এম পি এবং এম এল এ। অর্থাৎ এখনো পর্যন্ত যা খবর সূত্র অনুযায়ী শনিবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে তাঁর তৃণমূলের সাথে শেষবেলার গান আর নুতুন পথ চলার শুরু কেন্দ্রীয় সরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর হাত ধরেই।উল্লেখ্য ১৮ই ডিসেম্বর রাতে অমিত শাহ র আসা কোনো পূর্ব নির্ধারিত সূচনা ছিলো না।সূত্র অনুযায়ী শুভেন্দুর সাথে হাত মেলাতে পারেন বামফ্রন্টের দুজন দক্ষ সঙ্গগঠক। চিত্রটা স্পষ্ট হয়ে যাবে আর কয়েকদিনেই। শুভেন্দু অধিকারী বি জে পি তে গেলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন বর্তমান তৃণমূলের অবস্থা অনেকটাই ক্ষতি হতে পারে আর আসার আলো দেখতে পারে বঙ্গ বি জে পি ব্রিগেড।