ব্যারাকপুর , ১৮ নভেম্বর:- কর্তব্যরত অবস্থায় এক ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুকে ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল আগরপাড়া টেক্সমেকো কারখানায়। বুধবার দুপুরে ওই কারখানার ভেতর বয়লার ডিভিশনের অ্যাসবেসটর্সের ছাদে কাজ করতে গিয়ে হটাৎ নিচে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক মৃত্যু হল এক ঠিকা শ্রমিকের। জানা গিয়েছে মৃত ওই ঠিকা শ্রমিকের নাম বিশ্বজিৎ ঘোষ (৪২)। তার বাড়ি সোদপুরের নাটাগড়ের মহেন্দ্রনগরে। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে এদিন বেলা সোয়া এগারোটা নাগাদ বিশ্বজিৎ ওই কারখানার ভেতর বয়লার ডিভিশনের বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টে অ্যাসবেসটর্সের ছাদে উঠে কাজ করছিল। সেই সময় নিচে নামতে গিয়ে হটাৎ হাত ফসকে সে মাটিতে আছড়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় ওই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তারা ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে নিহত শ্রমিকের মৃতদেহ আটকে কারখানা ভেতর দীর্ঘক্ষণ ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। শ্রমিকদের মারফত খবর পেয়ে টেক্সমেকো কারখানা চত্বরে হাজির হয় মৃত ঠিকা শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ কারখানা কর্তৃপক্ষ মৃত বিশ্বজিৎয়ের পরিবারের সদস্যদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। এরপরই কারখানা গেটে থাকা সিকিউরিটিদের সঙ্গে ক্ষিপ্ত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের একপ্রকার ধস্তাধস্তি বেধে যায়। এমনকি ভেতরে ঢোকার চেষ্টায় তারা ওই কারখানার গেট ভেঙে ফেলারও চেষ্টাও করে। উপায়ান্তর না দেখে কারখানা কতৃপক্ষ অবশেষে মৃত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসে বেলঘরিয়া থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। এদিন কারখানা চত্বরে দাঁড়িয়ে মৃত ঠিকা শ্রমিকের ভাই সত্যজিত ঘোষ অভিযোগের শুরে বলেন,এখানে দাদার মৃতদেহ চার ঘন্টা ধরে পরেছিল।
অথচ কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকারী ভাবে দাদা মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানায় নি। তার অভিযোগ,এই কারখানায় শ্রমিকদের কোন নিরাপত্তা নেই। বয়লার ডিভিশনের অ্যাসবেসটর্সের ছাদের জীর্ণ অবস্থা। যে কোন সময়ে অন্যান্য শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনেই দাদা মৃত্যু হয়েছে বলে সাফ জানালেন মৃতর ভাই সত্যজিত ঘোষ। এই ঘটনা প্রসঙ্গে সিআইটিইউ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত গুহ বলেন,গত কয়েকদিন আগে আমফান ঝড়ে বয়লার ডিভিশনের অ্যাসবেসটর্সের ছাদ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শ্রমিকরা ওই ছাদের মেরামতির কাজ করছিল। এদিন সকাল সোয়া এগারোটা নাগাদ টিফিন টাইমে টিফিন করার জন্যে নিচে নামতে গিয়ে বিশ্বজিৎ নামে এক ঠিকা শ্রমিক শেড ভেঙে নিচে পড়ে যায়।
ঘটনাস্থলেই ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। যদিও তার দাবি ওই মৃত শ্রমিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তার কোমরে সেফটি বেল্ট লাগানো ছিল। কোন কারনে ওর কোমরে থাকা সেফটি বোল্টের হুকটি হয়ত খুলে গিয়েছিল। আর তাতেই এই বিপত্তি ঘটেছে। তার কথায় এদিন প্রশাসনের উপস্থিতে খারখানার চারটি ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কতৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় মৃত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লক্ষ টাকা নগদ ও তার পরিবারের একজনকে চাকুরী দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এরপরই শ্রমিকদের ক্ষোভ খানিকটা প্রশমিত হয়।