কোচবিহার , ১৫ নভেম্বর:- যার ছোঁয়ার লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর পুণ্য অর্জন হয়, সেই রাস চক্র কার হাতে তৈরি হয় জানেন ? বংশ পরম্পরায় সেই রাস চক্র নির্মাণ করে আসছে এক মুসলমান পরিবার৷ রাস যাত্রার আগেই মদন মোহন মন্দিরে পৌঁছে দিতে হবে সেই রাসচক্র৷ তাই স্বপরিবারে কাজ করে চলেছেন আলতাফ মিয়ার পরিবার৷ ছেলে, ছেলের বউ, নাতি নাতনী সকলেই।গত তিন পুরুষ থেকে রাস উৎসবের জন্য রাস চক্র নির্মান করছে আলতাফ মিয়া। তাঁর ঠাকুরদা পান মহম্মদ মিয়াঁ এই রাশ চক্র তৈরির কাজ প্রথম শুরু করেন৷ পান মহম্মদকে ডেকে কোচবিহারের মহারাজা রাস চক্র নির্মানের জন্য নির্দেশ দেন৷ গত ৪০ বছর ধরে এই চক্র নির্মাণের কাজ করে চলেছেন আলতাফ৷ শুধু চক্র নির্মাণই নয়, রীতিমত নিষ্ঠা ভরে লক্ষী পুজোর দিন থেকে উপোস করে নির্মাণের কাজ শুরু হয়৷
এই কদিন বাড়ির সবাই নিয়ম করে নিরামিষ ভোজন করেন। রাজ নির্দেশ, রাজ ঐতিহ্য সবটাই থাকে এই রাসচক্রে। ছয় কোনা এই চক্র, লম্বায় ১৮ ফুটের কিছু বেশি। ধবধবে সাদা কাগজে নকসা কাটা। ই নকসাও হাতে ই কাটা হয়। তারপরে আঠা দিয়ে বাঁশ এর কাঠামোর ওপরে লাগানো হয়। মাঝে থাকে বিভিন্ন্য দেব দেবীর ছবি। অতীতে এই ছবি গুলি ও হাতে ই আঁকা হতো, কিন্তু কালক্রমে তা কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন আলতাফ। আলতাফের আশা তাঁর ভবিষ্যত প্রজন্মও রাসচক্র বানাবে নিষ্ঠা ভরে৷ তাঁর ছেলে আমিনুর এখন তাঁর সঙ্গেই কাজ করেন৷ এছাড়াও তাঁর নাতি ৫ বছরের রাজু হোসেনও ঠাকুরদা ও বাবার সঙ্গে চক্র নির্মাণের কাজে হাত লাগিয়েছে৷ আছে বউমা।
এই রাসমেলা এক করে দেয় হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়কে৷ রাস চক্রে সম্প্রীতির ছাপ স্পষ্ট। এটিতে যে নকসা করা হয়, তা অনেকটাই তাজিয়ার মত দেখতে বলে মনে করেন সবাই৷ রাস উৎসবের মূল আকর্ষন রাস চক্র৷ সেই চক্র এখন তৈরি হচ্ছে কোচবিহারের হরিনচওড়া এলাকায় তোর্ষা নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় একচিলতে ঘরে৷ এবছর রাস চক্র নির্মানের বাজেট ৩০ হাজার টাকার মত। কাঁচা মালের জোগান দিয়ে খুব বেশি লাভ থাকে না৷ তবে লাভের অঙ্ক নয়, তিনি কাজ করে যান মনের টানে৷