এই মুহূর্তে কলকাতা

অপু থেকে ফেলুদা , বাঙলা চলচ্চিত্রের যুগাবসান !

কলকাতা , ১৫ নভেম্বর:- নিভে গেল দীপের আলো। চলে গেল বাঙালির ফেলুদা। দীর্ঘ ৪০ দিনের লড়াই শেষ। বাংলা চলচ্চিত্রের এক যুগের অবসান। প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবিবার দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সৌমিত্র বাবু। তারপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একাধিক কমর্বিডিটি ছিল তার। হাসপাতালে ভর্তির পর প্রথম দুদিন ভালো ছিলেন তিনি। তারপর থেকেই শরীর খারাপ হতে শুরু করে।অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশনের সমস্যা ছিল তার। জানা যায় তার মূত্রনালীতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে।

শেষ কয়েকদিন চিকিৎসায় সেভাবে সারাদিন ছিলেন না অপু। তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। মস্তিষ্কের সমস্যা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কৃষ্ণনগরের জন্মেছিলেন সৌমিত্র। তার বাবা ছিলেন মহিত কুমার চট্টোপাধ্যায়, মা ছিলেন আশালতা চট্টোপাধ্যায়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কৃষ্ণনগর পড়াশোনা তার। তারপর বাবার চাকরি সূত্রে হাওড়ায় চলে আসা। এরপর বাকি স্কুল জীবন কাটে হাওড়া জেলা স্কুলে। আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক হন। স্কুল জীবন থেকেই নাটক-আবৃত্তি নিয়ে চর্চা ছিল তার। কলেজে পড়ার সময় কাজ করতেন রেডিওতে। ১০৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার ছবিতে কাজ করেন তিনি। সেলুলয়েডে অভিষেক তার। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

সত্যজিত রায়ের ১৪টি ছবিতে কাজ করেছিলেন সৌমিত্রবাবু। সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্র বাবুর অভিনয় কালজয়ী। মৃণাল সেন, তপন সিনহা, অজয় করের মত বহু পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ছয় দশক ধরে কয়েকশো বাংলা ছবিতে নিরবিচ্ছিন্ন অভিনয় করে গেছেন সৌমিত্র। শুধু সিনেমায় নয় নাটক, টিভি সিরিয়াল,টেলিছবিতেও বহু কাজ করেছেন তিনি। নির্দেশনা করেছেন নাটক। আবৃত্তি ছিল তাঁর সহজাত প্রতিভা। গীতবিতান কার্যত মুখস্ত বলতে পারতেন সৌমিত্র বাবু। তার অভিনয় দক্ষতা আন্তর্জাতিক দরবারে সমাদৃত হয়েছে। পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, বঙ্গবিভূষণ,ফ্রান্সের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান পেয়েছেন সৌমিত্র বাবু। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া শুধু বাংলা নয় সারা দেশের সাংস্কৃতিক মহলে।