হুগলি , ১৪ নভেম্বর:- ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা নরবলি দিত সিমলাগর মা কালীর কাছে। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো পান্ডুয়ার সিমলাগড়ের মা কালী। শোনা যায় শেরশাহের জিটিরোড তৈরীর আগে এই পুজো শুরু হয়েছিল। সেই সময় ওই এলাকায় ঘন জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। সেখানে কোন জনবসতি ছিল না। মানুষজন ওই এলাকায় যেতে ভয় পেত। ওই এলাকায় তখন ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীর উৎপাত ছিল। সেই সময় ওই এলাকার একটি পুকুর পাড়ে এক কাপালিকের তালপাতায় ছাউনির মাটির দেওয়াল সহ একটি ঘড় ছিল। আর সেখানেই পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে ওই কাপালিক কালী সাধনা করতেন। শোনা যায় ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতেরা ওই ঘন জঙ্গলে এসে নরবলি দিত মা কালীর সামনে।
আরও জানা গেছে একসময় রঘু ডাকাত এখানে এসে কালী সাধনা করে গেছে। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্য চলাচলের জন্য এই রাস্তার গুরুত্ব বাড়ে। আর তখনই স্থানীয় মানুষজন ভয় কাটিয়ে ওই মন্দিরে পুজো দিতে শুরু করে। তারপরে কালী মন্দিরের উপর মানুষের বিশ্বাস বাড়তে শুরু করে। পরবর্তীকালে অবশ্য ওই মন্দিরের সংস্কার করে একটি বড় মন্দির তৈরি হয় ভক্তদের আর্থিক সহায়তায়। একদম জিটি রোডের ধারে সিমলাগড়ের এই কালী মন্দিরের প্রতিমা কিন্তু মাটির নয়, এটি পাথরের তৈরি। যদিও প্রতি বছর পুজোর আগে মূর্তিটিকে রং করা হয়। এখানে যারা পুজোর সেবাইত তাদের কাছ থেকে জানা গেছে যে লক্ষণ ভট্টাচার্যের পরিবারের আদি পুরুষ তার সময় থেকেই কালী পূজা শুরু হয়। ইতিহাস থেকে আরো জানা গেছে, এককালে ওই এলাকার নাম ছিল হরিহরপুর।
যদিও বর্তমানে এলাকার নাম হয়েছে সিমলাগড়। শোনা যায় ওই পরিবারের এক তান্ত্রিক তন্ত্র সাধনা করতে এসে ছিন্ন নরমুণ্ড দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আর এরপরই তিনি নরবলি প্রথা বন্ধ করে দিয়ে ছাগ বলির ব্যবস্থা করে। এখানে মাকে দক্ষিণা কালী রূপে পূজা করা হয়। প্রতিদিনই চলে নিত্য সেবা। কালীপুজোর দিন বিশেষ পূজা পাঠ এর ব্যবস্থা করা হয়। ১০৮ রকমের ভোগ নিবেদন করা হয় মাকে। বলি প্রথা থাকলেও মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয় মাকে। প্রতি বছরে বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তের সমাগম ঘটে মন্দির চত্বরে। কিন্তু এবছর করোনার কারণে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। মন্দিরের চারিদিক বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কোভিড সতর্কতার মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে।