এই মুহূর্তে জেলা

বিশে শুধুই পুজো, উৎসব একুশের জন্য তালাবন্দি রিষড়ার জগদ্ধাত্রীতে।

হুগলি , ১৩ নভেম্বর:- এবারের করোনার মহামারীর জন্য পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম জগদ্ধাত্রী উৎসব রিষড়ায় অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং পুজো কমিটির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিবছর হুগলির রিষড়ার পশ্চিম রেলপাড় এবং পূর্ব রেল পাড় জুড়ে প্রায় 100 টির মত পুজো অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটিই পুজো অত্যন্ত সুচারু ভাবে এবং দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। পুজো প্যান্ডেল আলোর জাদু এবং প্রতিমার অনিন্দ্যসুন্দর রূপে হাজার হাজার মানুষ আকৃষ্ট হয়ে প্রতিমা দর্শন এর জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন রিষড়ায়। কিন্তু এবার যেখানে মহামারীর প্রকোপে থমকে গেছে সারা বিশ্ব, সেখান থেকেও বাদ যায়নি আমাদের এই রাজ্যও। আনন্দ অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মানুষ অত্যন্ত সতর্ক ভাবে জীবন যাপন করছেন। তাই এবার এখানকার এই জগদ্ধাত্রী উৎসব অনেকটাই ম্লান, কিন্তু তা সত্বেও পুজো তো আর থেমে থাকবে না, ধর্মীয় আচরণ তো আর থেমে থাকবে না, তাই তারই মধ্যে পুজো হচ্ছে। প্রত্যেকটি পুজো কমিটি প্রশাসনের নির্দেশে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রিষড়ার অন্যতম সেরা পুজো তেতুলতলা রবীন্দ্র সংঘ এবছর তাই তাদের বাজেট অনেকটাই কাটছাঁট করে এই উৎসব অনুষ্ঠিত করছে। এ ব্যাপারে বলতে গিয়ে ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা সুব্রত মুখার্জি জানালেন আমাদের পুজো প্রতিবছর সেরা সেরা পুরস্কার পায় বিভিন্ন সংস্থার বিচারে। মানুষ তাকিয়ে থাকে সারা বছর এই পুজো দেখার জন্য। কিন্তু এ বছর প্যানডেমিক সিচুয়েশনে আমরা পুজো অনেকটাই ছোট করে করছি। তা সত্ত্বেও যাতে পুজোর মান একদম নিচে যাতে নেমে না আসে সেজন্য এবছরও আমরা থিমের পুজো করছি। আমাদের থিম কুড়িতে পুজো একুশে উৎসব। প্রশাসনের নির্দেশমতো আমরা বেশ কিছু নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের পূজামণ্ডপ স্যানিটাইজ করা হবে। এছাড়াও আমাদের পুজো দর্শন করতে আসার জন্য যে রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তায় উপর চারটি স্যানিটাইজার গেট বসানো হবে। দর্শকদের আসতে গেলে সেই গেটের ভেতরে দিয়ে আসতে হবে। এবং গেটে প্রবেশের আগে লক্ষ্য রাখা হবে যে প্রত্যেকের মুখে যাতে থাকে মাক্স থাকে, যদি কারও তা না থাকে তবে আমরা সেখান থেকে তাদের মাক্স দিয়ে তবেই দর্শকদের প্রবেশ করানো হবে। আমাদের এই পুজো প্যান্ডেলের পথের রাস্তার ধারে চারটি বিশাল বিশাল টিভি স্ক্রীন থাকবে যদি কোন দর্শক মণ্ডপের সামনে আস্তে না চান তাহলে আমাদের এই প্রতিমা এবং মন্ডপ সেই টিভির মাধ্যমে তারা দেখতে পাবেন।

এছাড়াও আমাদের এই পুজোর ক’দিন কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানের আমরা অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গরিব মানুষদের মধ্যে খাদ্য বস্তু সহ কম্বল বিতরণ, রক্তদান শিবির এবং যে সমস্ত মানুষ কবিদ মহামারীকালে সমাজের সেবা করেছেন যেমন স্বাস্থ্যকর্মী ডাক্তার সাফাই কর্মী সহ অন্যান্য যারা এই মারণ রোগের মোকাবিলায় ব্যস্ত ছিলেন তাদের আমরা সম্বর্ধিত করব। সব মিলিয়ে আমরা মানুষের কাছে আবেদন করব এবারের মতন পুজো সাধারণ ভাবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করুন। অন্যদিকে এখানকার আরেকটি অন্যতম সেরা পুজো বাঙ্গুর পার্কের পার্ক সম্মিলনী তারাও এবারের পুজো অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্লাবের সম্পাদক অনিমেষ দাশগুপ্ত জানান আমরা এবছর প্রশাসনের নির্দেশ মত এবং সরকারি বিধি নিষেধ মেনে পূজা পালন করব। প্যান্ডেলে কোন দর্শককে আমরা প্রবেশ করতে দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছি না। কেবলমাত্র পুরোহিত এবং কিছু সংখ্যক ক্লাব সদস্যরাই প্যান্ডেল এর ভেতর থেকে পুজোর অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন, এবং যথেষ্ট পরিমাণে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা করা হবে আমাদের মণ্ডপে।

এত বড় উৎসব সেই উৎসবে কি মানুষ অংশ নেবে না অল্পবিস্তর আনন্দ তো করবেই। তবে সবকিছু করা হবে কোবিদ বিধি মেনে। এমনকি অন্যতম আকর্ষণ এখানকার প্রতিমা বিসর্জন যা প্রতিবছর অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে হয়, দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা সকলে দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরা হয়, তা কিন্তু এবছর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুপুরের মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায়। সব মিলিয়ে এ বছর জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হলে ও জাঁকজমক কিন্তু থাকছে না। যে আলোর জাদু দেখতে যে প্রতিমার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দেখতে মানুষ প্রতিবছর ছুটে আসেন রিষড়ায় তা কিন্তু এবারে সেই সেই আনন্দ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হবেন তারা ।তবে পুজোর যে ধর্মীয় রীতি আচার-অনুষ্ঠান তা কিন্তু বজায় থাকবে। তাই রিষড়াবাসীর একটাই প্রার্থনা, মা মানব সমাজের উপর যে করাল মহামারী, করোনার যে থাবা নেমে এসেছে তা থেকে আমাদের মুক্ত করো। আবার যেন আগামী বছর ধুমধাম করে তোমার আরধনা করতে পারি।