এই মুহূর্তে জেলা

সিঁদুর খেললেন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি এবং বিধবারা , সংস্কার ভেঙে দিশা দেখালো বর্ধমান।

বর্ধমান , ২৭ অক্টোবর:- মা এর কাছে ভক্ত রা যেতে না পারলে মা স্বয়ং ভক্তের কাছে আসেন। তাই এই বছর কোনো মণ্ডপে নয়। বরং পরিনীতা হলো বন্ধ ঘরের মধ্যেই।নিজেরাই পুজো করে। ঢাক এর আওয়াজ আর ধুনোর গন্ধে মাতোয়ারা আপামর বাঙালি হৃদয়। আবার এক বছরের প্রতীক্ষা মা এর পুনরায় বাপ এর বাড়ী আসার। বিজয়া দশমীর গল্প। কিন্তু আজকের গল্প তো নেহাৎ বিজয়া দশমীর কথা নয়।আজ একটু পরিসর বৃদ্ধি পাক।ভেঙে যাক নিয়ম নীতির অচলায়তন গুলো।এই বিজয়া নেমে আসুক না হয় সব মা বোন এদের কাছে। এই বিজয়া হয়ে উঠুক না কেনো, আমাদের পরিনীতা। আপনাদের তো স্বামী মারা গেছেন। তাহলে সিঁদুর খেলা কেনো ???”এরকম আরো অনেক কথা বার্তার মধ্যে দিয়েই হারিয়ে যায় হাজার কোটি স্বপ্ন, বেঁচে থাকার ইচ্ছা রা,মানুষকে মানুষ জ্ঞান এ সেবা করার আকাঙ্খা গুলো। এক মোমের দেয়াল তৈরি হয় আচার বিচার এবং ভক্তি প্রেম ও ভালোবাসার মাঝে। আজ দিন বদলের গান।আজ দলছুট দের দল এ নাম লেখানোর পালা।আজ খেলা ভাঙার খেলা। আজ স্বপ্ন পূরণের দিন।

একটা এমন স্বপ্ন, যা দেখা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ঠিক ২৬ মাস আগে। সমাজের এক বৃহত্তম অংশের চোখ রাঙানি, আপত্তি এবং মেনে না নেয়ায় কারাগার এ বন্দী হয়ে পিছু হোটেছিলো সেই স্বপ্ন। মারা যায়নি কিন্তু বন্ধু রা।মারা যায় নি। বরং আবার স্বপ্ন দেখতে শেখায় সে। এক লড়াই যা পাহাড় প্রমান বিশাল।এক লড়াই যা জয় করা প্রায় অসম্ভব। ট্রান্সজেন্ডার এবং বিধবা মহিলা দের ও সিঁদুর খেলায় অংশ নেওয়া গত বছর এই পথের শুরু। এই বছর ও ট্র্যাডিশন সমান ভাবে দৌড়েছে। সারা ভারতবর্ষে আমরাই দ্বিতীয়।দু বছর পরপর আমরাই প্রথম সারা দেশে। ভুরু কুচকেছেন অনেক এ। ঠাকুরের পাপ এ ভস্ম হওয়ার হুমকি ও কিছু কম ছিল না। এই অনাসৃষ্টি কাজ এর জন্য নরকবাস এর টিকিট পর্যন্ত বরাদ্দ হয়ে ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা জানি বন্ধু রা, আমার তোমার মা যিনি, তিনি কখনো ভেদাভেদ করেন না।করতে পারেন না।সবাই তার সন্তান। মানুষ থেকেই মানুষ আসে।বিরুদ্ধতা ভিড় বাড়ায়।

আমরা পথ দেখালাম আজ। আমার শহর পেরেছে। বর্ধমান ফুডিস ক্লাব পেরেছে। এক ছোট্ট শহর দেখিয়ে দিল আজ সারা দেশ কে কি ভাবে এই ঠুনকো রীতি ভেঙে মানব সভ্যতা এগিয়ে যায়, কি ভাবে এগিয়ে যাবে আগামী দিনেও। আমরা প্রথম পা বাড়ালাম। বিস্বাস আছে, এরপর পিছন এ ঘুরে যখনই তাকাবো, এক লম্বা লাইন দেখতে পাবো আপনাদের। আমরা একা নই, আমরা একা থাকতে পারি না। পুজো প্রত্যেক এর। মা প্রত্যেক এর। কেউ ধুনুচি নাচ এ মা কে পাবে,আর কেউ গৃহবন্দি হয়ে মুছে যাওয়া সিঁদুর বা সৃষ্টির উপহাসকে বয়ে নিয়ে বেড়াবে, আমার শহর আমাদের সেই শিক্ষা দেয়নি। আমরা আছি এই পুণ্য লগ্নে, এই পুণ্য যোগ্যে।

বলাই বাহুল্য, বিধবা বিবাহ ও শুরু হয়েছিল। সতীদাহ ও শেষ হয়েছিল। আজ আমরা চাইলাম, কাল আপনারা প্রত্যেক এ যদি চান, এই বন্ধ দখিনা জানলা ও খুলে যাবে।হওয়া আসবে নতুন দিনের বার্তা বাহক হয়ে।আসবেই।কারণ কোনো ভালো কাজ হারতে পারে না। বরণ করে নেবে মা কে। সিঁদুর এ রাঙা হবে। মিলে যাবে দুই মন, নবীন প্রবীণ নতুন পুরাতন এর মেলবন্ধন এ পুণ্যতা পাবে আমার মা এর পুজো।