এই মুহূর্তে জেলা

কোচবিহার জেলা কমিটি ঘোষণার পরের দিনেই সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তাফা দিলেন তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী

কোচবিহার , ৩ অক্টোবর:- দলের জেলা কমিটি, ব্লক কমিটি ঘোষণা হতেই বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেল কোচবিহার জেলা তৃনমূলে। দলের প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে দলের সমস্ত সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মিহির গোস্বামী। সেই সাথে এই পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যদি বিধায়ক পদ ছেড়ে দিতে বলেন সেক্ষেত্রে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন বলে শনিবার সকালে কোচবিহার হরিশ পাল মোড় এলাকায় নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ঘোষণা করেন তিনি। তার এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে কোচবিহার জেলা রাজনীতিতে। তবে বিধায়কের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থ প্রতিম রায়। একই সাথে তার পদত্যাগ আটকাতে এদিন তার দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন টিম পিকের সদস্যরা।

কিন্তু তিনি তাদের কোনও কথা শুনতে নারাজ ছিলেন।এদিন তিনি বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একাধিক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তিনি রাজনীতি করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী। দলের কঠিন সময় তিনি দলের পাশেই ছিলেন। আজও থাকবেন। পদত্যাগ করলেও তিনি দলের রয়ে গেছেন বলে জানান মিহির বাবু। এক সংবাদ বিবৃতিতে তিনি জানান, সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেস কোচবিহার জেলা কমিটি গঠন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তার মনে হয়েছে দলীয় অনুশাসন অনুযায়ী সাংগঠনিক বিষয়ে বিধায়কের প্রস্তাবকে মেনে নেওয়ার কথা মুখে বলা হলেও তা বাস্তবে লংঘন করা হয়েছে। কেবলমাত্র ব্লক সভাপতির ক্ষেত্রেই নয় জেলা কমিটি নিয়ে বিধায়কের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা করা হয়নি। বিধানসভার ক্ষেত্রে মূল সংগঠক অর্থাৎ বিধায়ক, এরপর তাকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে জেলা নেতৃত্ব তার নিজের মতো করে কমিটি গঠন করেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি নিজে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট মন্তব্য প্রকাশ করে আসার পরেও অপমান অসহ্য। অতএব তার মনে হয়েছে আজকের এই দলে তার মত মানুষ একেবারে উপযুক্ত নয়। তাই তার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আজ তিনি নিয়েছেন।

দল তৃণমূল কংগ্রেস এর যাবতীয় সাংগঠনিক দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। একইসাথে তিনি অভিযোগ করেন, জেলার কিছু নেতৃত্বের কাছে রাজনীতি বিষয়ে পরিণত হয়েছে, রোজগারের রাস্তা হিসেবে রাজনীতিকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দলের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দলের যে সমস্ত কর্মীরা দীর্ঘদিন থেকে দলের জন্য লড়াই করে চলেছেন তাদের প্রতিও দল বঞ্চনা করছে বলে অভিযোগ করেন মিহির বাবু। তিনি তার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি একটি বেসরকারী সংগঠন যা তৃণমূল কংগ্রেসকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তিনি। তিনি বলেন অর্থের বিনিময় উক্ত সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোচবিহার জেলার কর্মীরা ভুলভাল রিপোর্ট উপর মহলে পাঠাচ্ছে। যে কারণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রসঙ্গত,তার সাংবাদিক বৈঠক এর পূর্বে সংগঠনের কয়েকজন সুব্রত বক্সীর সাথে কথা বলিয়ে দেওয়ার কথা বললেও তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন কথা বলতে। তার এই সিদ্ধান্তের পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি তার সাথে কথা বলেন তবেই তিনি কথা বলবেন বলে জানান। প্রয়োজনে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানান তিনি। তার এই সিদ্ধান্তের রীতিমতো উত্তাল হয়েছে জেলা রাজনৈতিক মহল। জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় মন্তব্য করে বলেন,আমার সাথে মিহির বাবুর কোন কথা হয়নি,সাংবাদিকদের মুখ থেকে শুনে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবোনা। আমি ওনার কাছে অবশ্যই যাব, একাধিকবার যাব। আজ সকাল থেকে ও বেশ কয়েকবার গিয়েছি ওনার সাথে দেখা করতে,দুর্ভাগ্যবশত দেখা হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওনার সাথে অবশ্যই দেখা করব।