এই মুহূর্তে কলকাতা

দারিভিট কান্ড ও মাতৃভাষা দিবস নিয়ে বিতর্ক।

নিজস্ব প্রতিনিধি , ১৯ সেপ্টেম্বর:- বাংলা ভাষা দিবস পালনের দাবী রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিজীবীদের একাংশ থেকে উঠে আসছে। ২০১৮ সালে ২০শে সেপ্টেম্বর দাড়িভিট গ্রামের দুই যুবক-রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মনকে মাতৃভাষার জন্য যেভাবে প্রান দিতে হয়েছিলো তা আমাদের স্মৃতিতে চিরজাগ্রত। বিরোধীদের মতে ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষা দিবসের প্রয়োজনীয়তা কোথায়? এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ১৯শে সেপ্টেম্বর কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি বির্তক সভার আয়োজন করে লিভারেজ। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সুরঞ্জন সরকার,ডঃ মোহিত রায়,সুজন চক্রবর্তী, সৈকত মন্ডল এবং অমিতাভ দত্ত।

এদিন শুরুতেই বিষয়ের বিপক্ষে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমিতাভ দত্ত। তাঁর বক্তব্য সহজ সরল ভাবে গল্প ও গানে শুরু হলেও তির্যক ভাবে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন আলোচনার এই বিষয়টিই অবান্তর। বাংলা ভাষা নিয়ে বাংলা দেশের মানুষের ত্যাগ ও লড়াইয়ে স্মরণ করে তিনি তুলে ধরেছেন সেই মাতৃ দিবসের সঙ্গে কোনোভাবেই মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। যদিও তাঁর বক্তব্যের তীব্র বিরোধতা করেন বিজেপি নেতা মোহিত রায়। তাঁর কণ্ঠের সঙ্গে জোরালো সুর মেলান তাঁর অন্যতম দুই সতীর্থ সুরঞ্জন সরকার ও সৈকত মণ্ডল। তাঁর মূল বক্তব্যে উঠে আসে বাংলা দেশের ভাষা দিবসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনো মিল নেই। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গেও তা যায় না।

ওই ঘটনাকে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা বলতেই তিনি বেশি তৎপর। বরং তিনি এবং সুরঞ্জন সরকার ও সৈকত মন্ডল এক সুরে দারভিটে বাংলা শিক্ষকের দাবির লড়াই এবং সেই লড়াই করতে গিয়ে রাজেশ-তাপস নামক দুই তরতাজা যুবকের গুলি খেয়ে মৃত্যু বরণ করাকে এ রাজ্যের মাতৃ ভাষা দিবস বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালের ওই ঘটনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এদিন মোহিত বাবু পশ্চিম বঙ্গে বর্তমান সরকার ও আগের বাম সরকারের সংখ্যালঘু তোষণকে দায়ী করেন। এ জন্য নানা ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তিনি প্রয়াত মুহ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ,প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এমনকি তৃনমূল সরকারকে দায়ী করেন। এখানেই বিরোধিতা করেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। বিজেপির বক্তব্যকে তুরি দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে অমিতাভ দত্তর সুরেই বলেন, ‘এই ঘটনার জন্য দুখঃ হয়। তবে ঘটনাটা বাংলা ভাষার জন্য নয়। বরং শিক্ষক নিয়োগের দাবি টাই ছিলো মুখ্য উদ্দেশ্য।

তিনি মোহিত বাবুদের বক্তব্যকে জোরের সঙ্গে খণ্ডন করে দাবি করেন এ রাজ্যের মানুষের সমস্ত দাবি আদায়ের লড়াইয়ে অগ্রণী ছিলেন একমাত্র বামপন্থীরাই। এমনকি মোহিত রায়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে বপন্থীরা ছিলেন না বলে যে দাবী ছিলো তার বিরোধীতা করে বারবারই তিনি বলেন একমাত্র কমিউনিস্টরাই স্বাধীনতার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেন,এমনকি ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের জন্য ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জেল খাটার তত্বকেও তিনি নস্যাৎ করে দেন। মোটের ওপর করোনা আবহে চলতি মাসে প্রেস ক্লাব খোলার পর প্রথম এ জাতীয় বিতর্ক সভা জমে ওঠে । দুরত্ববিধি ও কোভিড সতর্কতা মেনে এদিনের বিতর্ক ছিল এক কথায় জমজমাট।