এই মুহূর্তে জেলা

পঞ্চাশ লাখ খরচই সার , আজও অন্ধকারে দানবীরের সমাধিস্থল।

সুদীপ দাস , ১ আগস্ট:- হাতিম-এ-দরাকে-মুফিসি ! উর্দু ভাষার এই প্রবাদ বাক্যটির বাংলা করলে দাঁড়ায় যিনি নিজের জীবনে হাতিম তাই ছিলেন তাঁর সমাধিস্থলে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য কেউ নেই ! হুগলি ইমামবাড়া সংলগ্ন দানবীর হাজি মহম্মদ মহসীনের সমাধিস্থলে দাঁড়িয়ে একথাই আওড়ে যাচ্ছিলেন ষাটোর্দ্ধ সৈয়দ ইসলাম হোসেন । তাঁর কথায় শুধু হুগলি কেনো সমগ্র পূর্ব ভারতে মহসীনের মত দানবীর জন্মগ্রহণ করেনি । হুগলি জেলার ইমামবাড়া সদর হাসপাতাল , হুগলি মহসীন কলেজ তো রয়েইছে পাশাপাশি নদীয়া ও বাংলাদেশে তাঁর দানে গড়া বহু নিদর্শন আজও বর্তমান । ইংরেজী ১৭৩২ সালের ১লা আগষ্ট হুগলিতে জন্মগ্রহন করেন মহম্মদ মহসীন । তাঁর জীবনকালে মহিলাদের শিক্ষা নিয়ে অনবদ্য লড়াই চালিয়েছিলেন তিনি । সেসময় যা ছিলো চাঁদে যাওয়ার সমান । ১৮১২ সালে মহসীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে হুগলি ইমামবাড়ার সন্নিকটে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় । হুগলি নদীর তীরে যা আজ হাজি মহঃ মহসীন সমাধিস্থল নামে খ্যাত।

স্বাধীন ভারতের পর থেকে তাঁর দানে গড়া হাসপাতাল , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বাড়লেও প্রদীপ শিখার নীচেই থেকে যায় মহসীনের সমাধিস্থল । প্রত্যেক বছর মহসীনের জন্ম ও মৃত্যুর দিন তাঁর সমাধিতে চাদর চড়ানোর মধ্যেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সীমাবদ্ধ থাকে । ২০১১ সালে মমতার সরকার আসার পর ইমামবাড়া এলাকার বাসিন্দারা ভেবেছিলো এবারে হয়তো কিছুটা সন্মান পাবে মহসীন । প্রথমবারে কিছু না হলেও ২য় বারের তৃণমূল সরকারের আমলে গ্রীন সিটি প্রকল্পে মহসীনের সমাধিস্থল সংস্কারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ধার্য্য করা হয় । গতবছরের শেষের দিকে সেই কাজ শুরু হলেও এবছরের শুরুতে কাজ থমকে যায়। সমাধিস্থল সংলগ্ন ময়দানে কংক্রিটের রাস্তা এবং ফলক বসানোর জন্য কিছু স্তম্ভ ও ১৯ টি আলো বসানো হয়। কিন্তু মূল সমাধির কোন সংস্কারই হয়নি। বর্তমানে ১৯ টির মধ্যে একটি আলও জ্জ্বলে না। গোটা সমাধি এলাকায় আগাছার বাড়বাড়ন্ত । সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয়ে যায় দুঃষ্কৃতিদের কার্যকলাপ । সৈয়দ ইসলাম হোসেন বলেন আগামিকাল দানবীরের জন্মদিবস তাই অনেক বলাকওয়ার পর পুরসভা থেকে সাফাই কর্মী পাঠিয়েছে।

আগামিকালের পর থেকে আবারও এই এলাকা আগাছায় ভরে উঠবে । পাশাপাশি তিনি বলেন এখানে কাজের জন্য মুখ্যমন্ত্রী অনেক টাকা ধার্য্য করলেও মাঝপথে কাজ কেনো বন্ধ হয়ে গেলো আমরা তা কিছুই জানি না । স্থানীয় আর এক বাসিন্দা কার্তিক সিং বলেন মহসীন না থাকলে আজ হয়তো হুগলীই থাকতো না , আর সেখামেই কিনা ১৯ টি আলো লাগানো হলেও একটিও বর্তমানে জ্জ্বলে না । আমরা চাই মহান এই দানবীরের সমাধিস্থল যেন একটু আলোকময় থাকুক । চুঁচুড়ার বাসিন্দা সেখ মোক্তার বলেন সঠিকভাবে সংস্কার করা হোক মহসীনের সমাধিস্থলের । আগামি প্রজন্ম জানুক দানবীর মহসীনকে । যদিও এবিষয়ে পুরপ্রশাসক গৌরিকান্ত মুখার্জী বলেন গ্রীন সিটি প্রকল্পে মোট ৫০ লক্ষ টাকা মহসীনের সমাধিস্থলের কাজে ব্যায় হয়েছে । আশা করছি আরও টাকা এলে অবিলম্বে বাকি কাজ সমাপ্ত করা যাবে।