এই মুহূর্তে জেলা

১৫ দিনের তফাতে বাবা-দাদার শেষকৃত্য , কোভিডে মৃত মায়ের দেহ মজুত মর্গে , সাদা থানেই সরকারি দপ্তরের দরজায়-দরজায় ছেলে !

সুদীপ দাস , ১ আগস্ট:- লিভারে জল জমে মৃত্যু হয়েছে বাবার । ঠিক পনেরো দিনের মধ্যেই কো-মোর্বিডিটির কারনে প্রান গেছে দাদার । দাদার মৃত্যুর ১৮ দিনের মাথায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন মাও । বাবা ও দাদার শেষকৃত্য হলেও মায়ের দেহ এখনও পরে মর্গে । মায়ের মৃতদেহ দাহ করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন ছোট ছেলে ! মায়ের মৃত্যুর সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পর সরকারী কর্মীদের উদাসীনতার অভিযোগ তুললেন অভাগা ওই ছেলে । অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনাটি হুগলির ধনিয়াখালি থানা এলাকার । ধনিয়াখালি বাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যানার্জী পরিবার । এলাকার সভ্যতা গঠনে এই পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এলাকার লাইব্রেরী থেকে শুরু করে ধনিয়াখালি গার্লস এবং বয়েজ স্কুল , ধনিয়াখালি কলেজ সবই ব্যানার্জী পরিবারের পূর্বসুরীদের দানে গড়া । কিন্তু সেই পরিবারের এক সদস্যা মৃত্যুর সপ্তাহ পার হলেও মৃতদেহ দাহ করা হলো না । বর্তমানে ওই পরিবারের ছোট ছেলে কৌশিক ব্যানার্জী সাদা থান পরেই প্রতিদিন সরকারী দপ্তরের দোরে-দোরে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন ।

কৌশিকবাবু বলেন চলতি বছরের জুন মাসে ২১ তারিখ আমার বাবা কালিকৃষ্ণ ব্যানার্জী সিরোসিস অফ লিভারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। ঠিক ১৫ দিন পর অর্থাৎ জুলাইয়ের ৬ তারিখ দাদা গৌতম ব্যানার্জী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন । গৌতম বাবু কোভিডেও আক্রান্ত ছিলেন । এরপর মা মাধবী ব্যানার্জী ২৪ শে জুলাই কোভিড আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন । করোনা সন্দেহজনক অবস্থায় কোলকাতায় চিকিৎসার পর মাকে বাড়িতে নিয়ে এলেও তিনি সুস্থ হননি । ২৪ তারিখ ধনিয়াখালি গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দূর থেকে দেখে মাকে চুঁচুড়া হাসপাতালে স্থানান্তর করেন । কিন্তু তখন মা মারা গেছেন। সেখান থেকে ফিরে এসে মায়ের মৃতদেহ টানা কয়েক ঘন্টা বাড়িতেই ছিলো । কোন চিকিৎসক মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে রাজি হয়নি । পরে ধনিয়াখালি থানার বড়বাবুর বদান্যতায় মায়ের দেহ চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে আসি । এরপর মায়ের কোভিড টেষ্ট পজেটিভ আসে ।

তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত মায়ের দেহ মর্গেই পরে রয়েছে। মা ও দাদা করোনা আক্রান্ত ছিলো তাই আমার কাছে এলে করোনা হতে পারে সেজন্য এলাকাবাসীরাও আমার থেকে মুখ ফিরিয়েছে । সরকার আমার মায়ের দেহ দাহ করলে কোন আপত্তি নেই এই মর্মে বিডিওকে লিখিত দিলেও এখনও পর্যন্ত মায়ের সৎকার হলো না। তাই প্রতিদিন আমি সাদা থান পরেই সরকারী দপ্তরের দোরে-দোরে ঘুরে বেড়াচ্ছি ! এরপরেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কৌশিকবাবু বলে ওঠেন আমরা ধনিয়াখালির মানুষদের জন্য এতকিছু করলাম আর আজ আমাদের পাশেই কোন মানুষ নেই ! যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ বিকেলে কৌশিকবাবুর সাথে যোগাযোগ করে জেলা প্রশাসন । তাঁকে জানানো হয় আগামিকাল গভীর রাতে সরকারী উদ্যোগে তাঁর মায়ের দেহ দাহ করা হবে । তবে যাই হোক এহেন পরিবারের দেহ নিয়ে এত হয়রানি হতে হবে সেটা ব্যানার্জী পরিবারের পূর্বসুরীরা সেটা জানলে হয়তো আজ ধনিয়াখালিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিই গড়ে উঠতো না !