এই মুহূর্তে জেলা

কাঠের চেয়ারে বসানো সহপাঠীর সাদাকালো ছবি, মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদে শামিল স্কুলের পড়ুয়া থেকে শিক্ষকরা ।

 

 

হাওড়া,৪ ফেব্রুয়ারি:- একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করা শান্ত স্বভাবের মেয়েটির এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না ক্লাসের সহপাঠীরা। ও কারও সঙ্গে কোনও রকম ঝামেলায় যেত না। মিশুকে হওয়ার কারণে সবাই ওর কাছেই বসতো। ভালো আলপনা দিতে পারত। সরস্বতী পুজোর একদিন আগে থেকে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে মন্ডপ সাজিয়েছে। বলতো কলেজে পড়বো, টিচার হবো! কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হল না। মৃত ছাত্রী ভূঁয়েরা বিএনএস হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করত। বাড়ি উলুবেড়িয়া মহকুমার রাজাপুর থানার তুলসীবেড়িয়া অঞ্চলের সুমদা ধাড়াপাড়া গ্রামে। সরস্বতী পুজো দেখতে বেরিয়ে তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরল মৃতদেহ হয়ে। পাড়ার শ্মশানে দাহ করবার সময়েও এলাকার যুবকরা ছিল দাঁড়িয়ে। যতক্ষণ না দোষীদের ফাঁসি হয় দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে। এ দিন এলাকার ছেলে-মেয়েরা স্কুলে এসেছিল ব্যাগে মোমবাতি নিয়ে। বুঝে গিয়েছিল নির্ভয়া দিদির মতো ওদের পাড়ার মেয়েটিও দুষ্কৃতিদের হাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে !

There is no slider selected or the slider was deleted.

স্কুলের শিক্ষকদের কথায়, ছাত্রীটি আমাদের স্কুলে একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগে পড়শোনা করত। কিন্তু অভিযুক্ত যুবক আমাদের স্কুলে পড়াশোনা করত না। রেজিস্টারে নামও নেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীর পরিবারের কয়েকজন স্কুলে খোঁজ নিতে এসেছিলেন। যেহেতু স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে সেইমত ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। সেখানে দেখা যায় ছাত্রীটি ওইদিন স্কুলে আসেনি। তারপর পরিবারের লোকজন চলে যায়। স্কুলের পক্ষ থেকে ছাত্রীর বাড়িতে সমবেদনা জানাতে যাওয়া হয়েছিল। সোমবার স্কুল জুড়ে ছিল থমথমে ভাব। অন্যান্য দিন ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে ছোটাছুটি, কোলাহল করে তার ছিটেফোঁটাও এ দিন লক্ষ্য করা যায়নি। অনেক ছাত্রছাত্রী ব্যাগে করে মোমবাতি নিয়ে এসেছিল। নীরবতা পালন করার পর মোমবাতি জ্বালিয়ে ছাত্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদ জানানো হয়। স্কুলের সহপাঠীদের কথায়, আমাদের স্কুলের পড়াশোনার মান অনেক ভালো। ওই ছাত্রীর এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা জানতে পেরে চোখে জল এনে দিচ্ছে। সোমবার স্কুল খুলতে শোকপালন পালন করা হয়েছে। সরস্বতী পুজো যেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওখানে আলপনা দেওয়া মেঝের উপর কাঠের চেয়ারে ছাত্রীর সাদাকালো ছবি রাখা হয়। দেওয়া হয় স্কুলের ফোঁটা গাঁদা ফুল। তার সামনে স্কুলের খোলা জায়গায় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা মিলে দু’মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। মোমবাতি জ্বালিয়ে ছাত্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদ জানিয়েছি। বরাবরের খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। ঘটনা যেটাই ঘটে থাকুক ওর মৃত্যুর জন্য যে বা যারা দায়ি তাঁদের চরম শাস্ত্রির দাবি জানাচ্ছি ।

There is no slider selected or the slider was deleted.

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজো দেখতে বেড়িয়ে খোঁজ মিলছিল না তুলসীবেড়িয়া অঞ্চলের সুমদা ধাড়াপাড়া গ্রামের ছাত্রীর। তিনদিন পর রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় দেহ। ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে এলাকার আমির আলি নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। মৃত কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর জন্য শুধু আমির নয়, আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে। সব দোষীদের গ্রেপ্তার করে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিস। হাওড়া জেলা (গ্রামীণ)-এর পুলিস সুপার সৌম্য রায় জানিয়েছেন, সবদিক খতিয়ে দেখে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে একজন অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।

There is no slider selected or the slider was deleted.