এই মুহূর্তে জেলা

আর মাত্র কয়েক ঘন্টা,আলোক মালায় সজ্জিত ব্যান্ডেল চার্চ।


 

হুগলি,২৪ ডিসেম্বর:- সন্ধ্যা নামতেই  আলোয় অপরুপ সৌন্দর্যে ব্যান্ডেল চার্চ। আর মাত্র হাতে গোনা সময়, দশটার পরই শুরু হবে প্রভুর প্রার্থনা। তাই দুর দুরান্ত থেকে বহু মানুষ আসছে ব্যাডেল চার্চে। রাজ্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগে সাজিয়ে তোলা হয়েছে চারশো বছরেরও প্রাচীন এই গির্জা। ইতিহাসের দিকে যদি তাকানো যায়, কথিত আছে ভাস্কো দা গামা ভারতের পশ্চিম উপকূলে পা রাখার প্রায় এক শতাব্দী পর পর্তুগিজরা বাংলায় প্রবেশ করা শুরু করে। দ্রুত হুগলি নদীর তীর ধরে বসতি স্থাপন শুরু হয় এবং আজ যেখানে হুগলি জেলা, সেটা পর্তুগিজদের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৫৯৯ সালে হুগলি নদীর তীরে একটি গির্জা স্থাপিত হয়, সেটাই পশ্চিমবঙ্গের প্রথম গির্জা। এটিই ব্যান্ডেল চার্চ। কিন্তু পর্তুগিজদের সুখের দিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৬৩২ সালে মুগল সম্রাট শাহজাহান পর্তুগিজদের বসতিতে আক্রমণ করেন।

There is no slider selected or the slider was deleted.

                                                                                                                                                                              সেখানে একটি ছোট দুর্গও ছিল। পর্তুগিজরা চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত হয় এবং তাদের গির্জা ও কেল্লা ধ্বংস হয়ে যায়। বহু পর্তুগিজ এবং স্থানীয় খ্রিস্টানদের হত্যা করা হয়। ফাদার জোয়ান ডে ক্রুজকে বন্দি করে আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তাকে একটি মত্ত হাতির সামনে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু হাতিটি তাকে পায়ে পিষে ফেলার বদলে শুঁড়ে করে তুলে পিঠে বসিয়ে নেয়। এই ঘটনায় সম্রাট এতই চমৎকৃত হন যে, তিনি ফাদার এবং তার অনুগামীদের মুক্তি তো দেনই পাশাপাশি নতুন করে গির্জা তৈরির জন্য করমুক্ত জমি দান করেন। আশ্চর্য ঘটনার এখানেই শেষ নয়। যুদ্ধের সময় মাতা মেরির একটি মূর্তি হুগলি নদীতে ভেসে যাচ্ছিল, সেটা উদ্ধার করতে এক স্থানীয় খ্রিস্টান জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটিকে আর উদ্ধার করা যায়নি। নতুন করে গির্জা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় সেই মূর্তিটি হঠাৎ পাড়ে ভেসে ওঠে। মূর্তিটির নাম দেওয়া হয়, ‘আওয়ার লেডি অফ হ্যাপি ভয়েজ’। গির্জা উদ্বোধনের উদযাপন যখন চলছে, তখন একটি বিপর্যস্ত পর্তুগিজ জাহাজের পাল চোখে পড়ে সবার। জনা যায়, কিছু দিন আগেই জাহাজটি প্রবল ঝড়ের মুখে পড়েছিল। ভাগ্যক্রমে নাবিকরা জীবিত রয়েছে। ঝড়ের সময় জাহাজের ক্যাপ্টেন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি প্রথম যে গির্জাটিকে দেখবেন,

There is no slider selected or the slider was deleted.

                                                                                                                                                                                                                                                                                      সেখানে জাহাজের প্রধান মাস্তুলটি দান করবেন। ক্যাপ্টেন তার সে কথা রেখেছিলেন। সেই মাস্তুলটি এখনও গির্জা প্রাঙ্গণে রাখা আছে। মাস্তুলকে পর্তুগিজ ভাষায় ব্যান্ডেল বলা হয়। সেই থেকেই এই গির্জার নাম ব্যান্ডেল চার্চ। গির্জাটিতে একটি বিশাল ঘড়িসহ স্তম্ভ রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতে প্রচুর পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরনো স্থাপত্যের কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই। হুগলি নদীর তীরে একটি বেঁকানো দরজা দিয়ে গির্জায় ঢুকতে হয়। দরজার ওপরে নৌকোয় মাতা মেরি ও শিশু যিশুর মূর্তি রয়েছে।  সাধারণত বড়দিনের দিন বন্ধ থাকে এই চার্চ। কিন্তু চার্চ সংলগ্ন মাঠ সাজিয়ে তোলা হয়েছে যিশুর কাহিনি।  ছুটির দিনে চার্চ সংলগ্ন গঙ্গার পারে বহু মানুষ আসে পিকনিক করতে।

There is no slider selected or the slider was deleted.