অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়,৮ ডিসেম্বর:- চার্চিলের কাছে চার গোল হজম বিধ্বস্ত বাগানের দেবজিৎ যেন অতীতের ছায়া । ভারতীয় ফুটবলে বাংলা বনাম গোয়ার লড়াইটা বহুকালের। গোয়া ফুটবলের সেই প্রতাপ না থাকলেও লড়াইটা কোথাও যেন থেকেই গিয়েছে । আর সেই লড়াইয়ে বাংলার মাটিতে এসে গঙ্গাপাড়ের ক্লাবকে ছারখার করে দিয়ে গেল সৌজন্যে ইস্টবেঙ্গলের বাতিল বিদেশি ত্রিনিদাদ টোব্যাগোর উইলিস ডিওন প্লাজা। আইজলের বিরুদ্ধে ড্র করে আই লিগ অভিযান শুরু করেছিল মোহনবাগান । রবিবার লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে তারা হজম করল চার চারটি গোল। কল্যাণী স্টেডিয়ামে এদিন উপস্থিত নিখাদ ফুটবলপ্রেমীরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলেন ম্যাচ । নির্ধারিত সময়ে হল মোট ৬টি গোল । যার মধ্যে বাগান হজম করেছে চারটি গোল। সৌজন্যে ড্যানিয়েল সাইরাসদের শিশুসুলভ ডিফেন্স। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলে মরসুমের শুরুতে হ্যাটট্রিক করতে পারতেন উইলিস প্লাজা।
চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে এদিনের হারের পর একাধিক প্রশ্ন উঠতে পারে স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনার পরিকল্পনা বা প্রশিক্ষণ নিয়ে। গোটা ম্যাচ জুড়ে তাঁর দল বলের দখল রাখল ঠিকই, কিন্তু গোল করা এবং গোলমুখ আগলে রাখার ক্ষেত্রে একেবারেই মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেননি সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। ভিকুনার পাশাপাশি এদিনের হারের দায় কোনও মতে এড়াতে পারবেন না ফুটবলাররা। বিশেষত রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। এদিকে মাঠ নিয়ে অভিযোগ জানানোর কোনও উপায় নেই। কারণ, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে শহর লাগোয়া এই মাঠের প্রশংসা করেছিলেন বাগান প্রশিক্ষক স্বয়ং। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র দ্বিতীয়ার্ধেই ৭৫ শতাংশের বেশি বল পজিশন রেখেছিলেন জোসেবা
বেইতিয়ারা । মাঝমাঠে খেলা তৈরি হলেও আক্রমণভাগে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছিল দল। ক্রস ছাড়া বিপক্ষের বক্সে বল পাঠানোর অন্য কোনও টোটকা দেখা যায়নি মোহনবাগানের খেলায়। দলের পাঁচজন স্প্যানিশ ফুটবলার থাকলেও দেখা মেলেনি তিকিতাকা বা ওয়ান টাচের। ম্যাচে শুরু হওয়ার মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে পিছিয়ে পড়েছিল বাগান। চার্চিলের আচমকা দৌড়ে কার্যত থমকে গিয়েছিল শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের
ডিফেন্স। লিগের দ্বিতীয় ম্যাচেও সালভা চামারোকে প্রথম একাদশের বাইরে রেখে ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন কোচ। সামনে ভিপি সুহের । মিনিটে পিছিয়ে পড়ার পর ২৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে চার্চিল। রবার্ট প্রিমাউসের গোলে বাগান তখন পিছিয়ে ০-২ স্কোরলাইনে। গঙ্গা পাড়ের তাঁবুতে সাময়িক স্বস্তির বাতাবরণ এনেছিলেন মুনোজ গঞ্জালেজ। ৩৩ মিনিটে তাঁর পেনাল্টি কিক থেকে ব্যবধান কমায় বাগান। যদিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাগান সমর্থকদের এই উচ্ছ্বাস । পাঁচ মিনিট কাটতে না কাটতেই ফের বল প্রবেশ করল বাগানের তেকাঠিতে। মরসুম তিন আগে যে দেবজিৎ মজুমদারকে নিয়ে গর্ব করতেন দলের সভ্য সমর্থকরা, আজ সেই দেবজিৎ যেন অতীতের ছায়া মাত্র । গোল হজম করার ক্ষেত্রে কোনও ভাবেই দায় এড়াতে পারবেন না তিনি । বিরতির আগেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের ভাগ্য। ঘরের মাঠে বাগান পিছিয়ে ১-৩ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে চার নম্বর গোল চার্চিলের । আবু বাকারের গোলে ম্যাচে চলে আসে অ্যাওয়ে দলের হাতের মুঠোয় । ৯০ মিনিটে বাগানের হয়ে সান্ত্বনা সূচক গোল শুভ ঘোষের । ম্যাচের ফলাফল মোহনবাগান ২-৪ চার্চিল ব্রাদার্স।