এই মুহূর্তে জেলা

উদ্বোধন হওয়ার আগেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস রোডের নির্মীয়মাণ সেতুর বেহাল অবস্থা

মালদা,২৭ নভেম্বর:- উদ্বোধনই হলো না, অথচ তার আগেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস রোডের নির্মীয়মাণ সেতুর চাঙর খসে পড়তে শুরু করলো। এমনকি নতুন ওই সেতুর তলের একাংশ জায়গাতে লোহার রড বেরিয়ে এসেছে। যা নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মালদার মানুষের। রীতিমতো প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ওই সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। দু’বছরের মধ্যে গড়ে ওঠা বাইপাস রোডের মহানন্দা নদীর উপর তৃতীয় এই সেতুটি এরকম জরাজীর্ণ অবস্থা কেন হল তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শহরের একাংশ মানুষের অভিযোগ,  এই সেতু তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যে ঠিকাদারি সংস্থা এই সেতু তৈরির কাজ করেছেন তারা কাজে অনিয়ম করেছে। কখনো-সখনো ভারী যানবাহন চলাচল করলেই কেঁপে উঠছে বাইপাস রোডের নির্মীয়মাণ মহানন্দা নদীর উপর অবস্থিত নতুন  তৃতীয় সেতুটি বলে অভিযোগ। আর তারপরই সেতুর নিচের অংশ থেকে ঝুরঝুর করে চাঙড় খসে পড়ছে। অনেক জায়গায় সেতু থেকে লোহার রডও বেরিয়ে গিয়েছে । সব নিয়ে এখন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মালদার মানুষ। উল্লেখ্য , ইংরেজবাজার থানার সাদুল্লাপুর মোড় থেকে শুরু করে পুরাতন মালদা থানার নলডুবি এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস রোড তৈরি হয়েছে। মালদা শহরের মধ্যে অবস্থিত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের যানজট এবং দুর্ঘটনা কমাতে এনএইচআইএ (ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) কর্তৃপক্ষ নতুন বাইপাস রোড তৈরি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জমি অধিগ্রহণের পর ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়ে যায় নতুন এই বাইপাস রোড তৈরির কাজ। মাত্র দু’বছর হলো মালদা শহরের রামনগর কাছারি এলাকার মহানন্দা নদীর ওপর বাইপাস সড়কের তৃতীয় সেতুটি গড়ে তোলা হয়েছে। সম্পূর্ণ কাজটি এনএইচআইএ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেই বিভিন্ন ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে করা হয়েছে। আর এই সেতু তৈরির পর থেকেই এখন বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাইপাস রোড দিয়ে মাঝে মধ্যে কোনো যানবাহন গেলে কেঁপে উঠছে ওই নতুন সেতুটি। তারপরে সেতুর তলের সিমেন্ট, বালির চাঙর খসে পড়ছে । রামনগর কাছারি এলাকার বাসিন্দা পলাশ বর্মন, জয়দীপ দে, দীনেশ হালদারদের বক্তব্য, সেতুর নিচে যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে। মাথার ওপরে সেতু চাঙর খসে নিচে পড়ছে। যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি। কি এমন কাজ হলো যে দু’বছরের মধ্যে একটা নতুন সেতুর জরাজীর্ণ অবস্থা হয়ে গেল । সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এই কাজই তার প্রমাণ করে দিয়েছে। আমরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলবো যেন এই সেতুর নতুন করে সংস্কার করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইংরেজবাজারের বিধায়ক নিহার ঘোষ বলেন, ভাবতেই অবাক লাগছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস রোডের মহানন্দা নদীর ওপর নতুন এই সেতুর অবস্থা এরকম হয়ে পড়বে। যেখান থেকে সিমেন্ট , বালির চাঙর খসে পড়ছে। লোহার রড জরাজীর্ণ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। মানুষ আতঙ্কে রয়েছে । জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কি কাজ করলো যে একটা নতুন সেতুর অবস্থা কয়েক বছরের মধ্যে এমন হয়ে গেল। অথচ এই বাইপাস রোড উদ্বোধনী হলো না‌ তার আগেই এমন অবস্থা । আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এনএইচআইএ কর্তৃপক্ষকে বলবো দ্রুত সেতু সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু বলেন, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এই বাইপাস সড়কের অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু যে বাইপাস সড়ক উদ্বোধন হলো না, তার আগে সেতুর চাঙর খসে পড়তে শুরু করলো। এখানেই বুঝা যাচ্ছে সড়ক ও সেতু তৈরির কাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে । মানুষের প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। আর যারা কাজ করছে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। এর আগেও আমরা বাইপাস সড়ক দ্রুত চালুর বিষয় নিয়ে এনএইচআইএ কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন দিয়েছিলাম। এবার আমরা নিম্নমানের সেতু তৈরির বিষয় নিয়ে আন্দোলন করবো এবং ডেপুটেশন দিব। যদিও পুরো ঘটনাটি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে এনএইচআইএ’র মালদার কর্তৃপক্ষ । তারা এব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।