হুগলি,২২ ডিসেম্বর:- সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রকৃতির উপরে নির্ভর করেই বলাগড়ের কৃষকদের পেঁয়াজ চাষ করতে হয়।কখনো অধিক ফলনে পেঁয়াজের দাম না পেয়ে মাঠেই পচে নষ্ট হয় ফসল।কখনো আবার চড়া দামে পেঁয়াজের বীজতলা কিনতে গিয়ে চোখে জল আসে কৃষকের। আবহাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারের চাহিদার সঙ্গে যোগানের জন্য বলাগড়ে পেঁয়াজ সংরক্ষন কেন্দ্র নির্মানের পক্ষে সাওয়াল করেছেন কৃষকেরা।যদিও কয়েক বছর আগে মুন্ডখোলায় একটি সমবায়ের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে একটি পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে পেঁয়াজ সংরক্ষন কেন্দ্র খোলা হয়।কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সংরক্ষন কেন্দ্র ফেল করে। সেখানে রাখা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতেই ধুঁকতে থাকে সংরক্ষন কেন্দ্র।বলাগড়ের বিডিও শমিত সরকার বলেন,এবারে ২৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। বলাগড়ে পেঁয়াজ সংরক্ষনের পাকাপাকি ব্যবস্থা না থাকলেও তিনশো সাড়ে তিনশো কৃষকদের সরকারি সহায়তায় নিজেদের বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।বলাগড় ব্লক ঘুরে জানা গিয়েছে
বড়াল,জগন্নাথপুর,জিরাট,সিজাকামালপুর,আমজানপুর,পানিখোলা,কামালপুর,চকছাড়া,ডুমুরদহনিত্যানন্দন্দপুর,পুরাতনবগা,নতুনবগা,একতারপুর,বাকুলিয়া,মুকুটপুর,ইছাপুর,বাতনা,সেনপাড়া মিলিয়ে গোটা ব্লকের ৭০ শতাংশ কৃষক পেঁয়াজ চাষ করেন।কৃষকেরা জানিয়েছেন বলাগড়ের পেঁয়াজ সুখ সাগর পেঁয়াজ নামে পরিচিত।এই পেঁয়াজ আকারে বড় ও মিষ্টি।সুস্বাদু সুখ সাগর পেঁয়াজ যদি ঠিক মতো সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সারা বছর ন্যায্য দামে সাধারণ মানুষ আজার থেকে যেমন পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।ঠিক তেমনি কৃষকেরা পেঁয়াজের ন্যয্য দাম পাবেন।বলাগড়ের পেঁয়াজ চাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকেরা জানিয়েছেন, গত বছর বলাগড়ে অধিক ফলনে আমরা পেঁয়াজের দাম পাইনি।প্রাথম দিকে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪ টাকা পেলেও পরের দিকে ৫০কেজির বস্তা ১০০ থেকে ৮০ টাকায় বিকিয়েছে। চাষ করে পেঁয়াজের খরচ না ওঠায় অনেকে মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলে নি।মাঠেই পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যায়।গতবার পচা পেঁয়াজের গন্ধে বলাগড়ের বাতাস ভারী হয়ে ছিল। এবারে বাজার থেকে পেঁয়াজ উধাও।বীজতলা কিনতে গিয়ে দামের ঝাঝে চোখ দিয়ে জল বেরনোর উপক্রম।এছাড়া গত বছর পেঁয়াজের শশ্য বীমার টাকা কৃষকেরা না পাওয়ায় এবছরে পেঁয়াজ চাষ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ কমেছে বলে মানছেন কৃষকেরা।আহমেদপুরের কৃষক শৈলেন ঘোষ বলেন, ধান আর পাট চাষের পর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়।নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই জমিতে সেচ দিয়ে পেঁয়াজের বীজতলা বসাতে হয়।ফেব্রুয়ারি মার্চে পেঁয়াজ তোলা হয়।এবারে পুজোর সময়ে বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়।তারপরেও কিছুটা বীজতলা বাঁচিয়ে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে জমিতে বসায়। কিন্তু ওই সময় বৃষতি হতে ফের পেঁয়াজ চাষের মারাত্বক ক্ষতি হয়।বীজতলা পর পর দুবার নষ্ট হয়ে যেতেই পেঁয়াজের ফলন নিয়ে মনে সংশয় রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।বড়াল গ্রামের কৃষক অনুপ পটারি বলেন, বলাগড়ে পেঁয়াজ সংরক্ষিত না হলে কৃষকেরা আর পেঁয়াজ চাষ করবে না।তার কথায় এবারে দুর্গা পুজোর আগে ও পরের বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।এখন এক বিঘে জমির জন্য পেঁয়াজের বীজতলার দাম চাইছে ১০হাজার টাকা।বীজতলা ছারাও জমিতে রুইবার জন্য কৃষকদের ২৫০ টাকা মাথা পিছু দঈনিক মজুরি দিতে হবে।এছাড়া সার খোলের খরচ আলাদা।বাড়তি বীজতলার জন্য ১০হাজার টাকা দিতে গিয়েই পেঁয়াজ চাষ বন্ধ করে কৃষকেরা।সুচাঁদ সেন নামে এক কৃষক বলেন, চার বিঘে জমিতে পেঁয়াজের বীজতলা বসিয়ে ছিলাম। দুবারের বৃষ্টিতে সব ধুয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।এবারে বেশি দাম দিয়ে বীজতলা কিনে দুবিঘা জমিতে পেঁয়াজ বসিয়েছি।তবে শস্য বীমার টাকা পাইনি।সেটা পেলে চাষের কাজে কিছুটা সুবিধা হত।বীরেন্দ্রনাথ সেন নামে জগন্নাথপুরের কৃষক বলেন, আমি কখনো ভাবিনি বাজার থেকে আমাদের মতো পেঁয়াজ চাষিদের ১০০ টাকা করে পেঁয়াজ কিনে খেতে হবে।তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে যখন বলাগড়ের সুখ সাগর পেঁয়াজ মাঠ থেকে তুলে বাজারে পাঠানো হয় ওই সময়ে নাসিকের পেঁয়াজ ঢুকে পড়ে।সেই কারনেই আমাদের মতো কৃষকেরা পেঁয়াজের দাম পায়না। আমাদের এখানে পেঁয়াজ সংরক্ষন কেন্দ্রের খুব প্রয়োজন।সমবায়ের মাধ্যমে সরকার নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষন কেন্দ্র করলেও সেখানে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।তাই ওই সংরক্ষন কেন্দ্র কোন কাজে আসেনি।কৃষকেরা কেউ কেউ নিজের বাড়িতে পেঁয়াজ ঝুলিয়ে রেখে মাস কয়েক রেখে ছিলেন।কিন্তু তার থেকেও সমস্যা মেটেনি। বলাগড় কৃষক ঐক্য অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক তরুন সেন বলেন, সংরক্ষন কেন্দ্র না হলে এখানকার পেঁয়াজ চাশিরা মরে যাবে।বলাগড়ের সুখ সাগর পেঁয়াজ কলকাতা,বিহার,ধানবাদ উড়িষ্যাতে যায়।আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি বলাগড়ে স্থায়ী পেঁয়াজ সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে।বলাগড়ের বিধায়ক অসীম মাজি বলেন, মুন্ডুখোলা বাকসাগড় সমবায় তে পেঁয়াজ সংরক্ষনের জন্য একটা পাইলট প্রজেক্ট হয়েছি।নাইট্রজেন গ্যাসের মাধ্যমে ৮০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ সংরক্ষনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।কিন্তু প্রকল্প তে পদ্ধতীগত কিছু ভুল থাকায় সমস্যা হয়।আমরা খরগপুর আই আই টি তে যগাযোগ করেছি।ভুল ত্রুতি গুলো শুধরে যাতে পাকাপাকি ভাবে বলাগড়ে পেঁয়াজ সংরক্ষন কেন্দ্র চালানো যায় তারজন্য চেষ্টা করছে ।