এই মুহূর্তে কলকাতা

ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে শাসক-বিরোধী চাপান উতরে উত্তপ্ত বিধানসভা।

কলকাতা, ২৭ জুলাই:- আশঙ্কা ছিলই। সেই মত পঞ্চায়েত ভোট ও ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে শাসক বিরোধী চাপান উতোরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন।ভোট এবং ভোট পরবর্তী হিংসা ও নারী নির্যাতনের ঘটনাকে সামনে রেখে মঙ্গলবার বিরোধী বিজেপির আনা এক মুলতুবি প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির নেতারা শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন। বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিস্তরীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে। জবাবি ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ত্রিপুরার পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং মণিপুরের সাম্প্রতিক হিংসার প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির পাল্টা সমালোচনা করেন। গত বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে কৌশল করে তাঁকে হারানো হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন।এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেন,

‘যিনি এর আগে এতক্ষণ বললেন, তিনি আগে তৃণমূলে ছিলেন, তিনি কিন্তু আগের কথা বললেন না। বাম জমানার কথা বলা হয় না। কেন্দ্র যেমন ভোট করায় না, তেমনই রাজ্য সরকারও কিন্তু ভোট করায় না। লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে চিরকুটে পুলিস বদল হয়! নন্দীগ্রামে ২ ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে দিয়ে কী হয়েছিল ভুলে গেলেন?’ এদিকে মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ উল্লেখ করার সঙ্গে সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি বিধায়করা নিজেদের আসনে দাঁড়িয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এর পরেও মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য চালিয়ে যাওয়ায় তাঁরা কালো পতাকা দেখিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষন এরকম চলার পর শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিরোধীরা কক্ষত্যাগ করেন। পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাবি করেন, বিগত একাধিক ভোটের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে অনেক কম হিংসার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যেখানে ভোট পর্বে ৩৯ জন মানুষের প্রাণ গিয়েছিল সেখানে এবার মোট ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের মধ্যে ১০ জনই তৃণমূলের। একই সঙ্গে মনোনয়নের পরিসংখ্যান পেশ করে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন এবারের পঞ্চায়েত ভোটে ২ লক্ষ ৩১ হাজারের বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে।

যার মধ্যে বিজেপি একাই ৫৪ হাজার মনোনয়ন জমা দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, পঞ্চায়েতে ৭১ হাজারের বেশি বুথে ভোট হয়েছে। যার মধ্যে সামান্য কয়েকটিতে গন্ডগোল হয়েছে। বিরোধীরা সেই সব ঘটনাকে তুলে ধরে রাজ্যকে বদনাম করছে। ভোটে ৮০ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করেও কেন হিংসা ছড়ালো তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।এখানেই শেষ নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় আরও অভিযোগ করেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে গিয়ে প্ল্যান করে এসেছেন। কিছু কথা আমি শুনেছি।’ তিনি দাবি করেন, ‘রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আরও ৩ বঙ্গ বিজেপি নেতা ছিলেন। তাদের মূল অ্যাজেন্ডা-ই হল- সমাজকে ভেঙে দাও, মহিলাদের উপর হওয়া অপরাধকে বড় করে দেখাও, এমন পরিস্থিতি তৈরি কর যেখানে বাংলার সরকারকে ছোট ও নিচু দেখানো যায়। আদিবাসী, গোর্খা ও মতুয়াদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। ২০২৪-এ লোকসভা ভোটে ফায়দা তুলতেই ছোট ছোট পকেট করে বিভাজন তৈরির নীতি নিয়েছে বিজেপি।’

ওদিকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী যখন বিধানসভা ভোটে ছাপ্পা-ভোট লুঠের অভিযোগ করছেন শুভেন্দুকে নিশানা করে, তখন পালটা পঞ্চায়েতে ভোট লুঠের অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারীও। শুভেন্দু বলেন, ত্রিস্তরীয় ভোট লুঠ হয়েছে। এর দায় রাজ্য সরকারের। মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। শুভেন্দু দাবি করেন, ‘চুপি চুপি ভোট হয়েছে!’ কারণ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব নিয়েই ভোটের দিন ঘোষণা করে দেন। ভোটের দিন ঘোষণার আগে কোনও সর্বদলীয় বৈঠক হয়নি বলেও তোপ দাগেন শুভেন্দু। একইসঙ্গে মমতার ‘বিভাজন’ তোপেরও পালটা জবাব দেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সমাজকে বিভাজিত করার রাজনীতি করেন। আর বিজেপি সবাইকে জোড়ে। তিনি বিভাজনের রাজনীতি করেন বলেই লক্ষ্মী ভান্ডারে কেউ ৫০০ পায়, কেউ ১০০০ পায়!’