মালদা১৫ ফেব্রুয়ারি:- ভুতে ধরার আশঙ্কা করে চার ক্ষুদে শিশুর ওপর রাতভোর গুনিন-ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁকের চালানোর অভিযোগ অভিভাবকদের। আর তার পরেই দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে গাজোল থানার কদমতলী এলাকায়। পাশাপাশি আরো দুই শিশুকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গাজোল থানার আলাল গ্রাম পঞ্চায়েতের কদমতলী গ্রামে। ভুতে ধরেছে শিশুদের ! যার কারণে এই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, এমনই আতঙ্ক এখন কদমতলী গ্রামের বাসিন্দাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে । অনেকেই ভূতের ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে পুরো বিষয়টি জানতে পেরে রীতিমতো হতবাক হয়ে পড়েছেন গাজোলের তৃণমূল দলের বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস । শিশু মৃত্যুর খবর জেনেই শনিবার সকালেই মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ দুই শিশুকে দেখতে আসেন তৃণমূল দলের বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস। কথা বলেন পরিবার লোকেদের সঙ্গে। এরকম কুসংস্কার যাতে গ্রামবাসীদের মধ্যে না ছড়ায় তা নিয়েও শনিবার ওই গ্রামে যান বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস। কি কারণে শিশুদের হঠাৎ করে মৃত্যু হলো সেব্যাপারেও পুলিশ ও প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার কথা বলেন বিধায়ক । পাশাপাশি ওই গ্রামে পাঠানো হচ্ছে মেডিকেল টিম বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত দুই শিশুর নাম সফিকুল আলম (৫), ফিরোজ রহমান (৭)। মেডিকেল কলেজে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসারত রয়েছে কোহিনুর খাতুন (৬), শাবনুর খাতুন (৩)। এরা দুই বোন । প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে কদমতলী গ্রামের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি জঙ্গলের মধ্যেই ওই চার শিশু খেলা করছিল। এরপরই হঠাৎ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে শিশুরা অসুস্থ বোধ করে জ্ঞান হারিয়ে যায় । ওদের মুখ দিয়ে গ্যাজলা বেড়াতে থাকে। এতেই পরিবারের লোকেদের ধারণা হয় যে ওই শিশুদের ভুতে ধরেছে। এরপরই গুনিন-ওঝাদের এনে ঝাড়ফুঁক শুরু করে পরিবারের লোকেরা। দীর্ঘক্ষন শিশুদের নিয়ে চলে নানানভাবে ঝাড়ফুঁকের কাজ। অবশেষে কোন পরিনাম না মেলায় তাদের নিয়ে আসা হয় মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পথেই মৃত্যু হয় সফিকুল আলম নামে এক শিশুর। এরপরই মেডিকেল কলেজের চিকিৎসারত অবস্থায় ফিরোজ রহমানের মৃত্যু হয়। অসুস্থ কহিনুরের মামা আসিফ শেখ বলেন, গ্রামে ভূতের তান্ডব শুরু হয়েছে । শিশুদের ওপর ভর করছে ভূত। যার কারণে এই দুই শিশু মারা গিয়েছে। আমার দুই ভাগ্নিরা ভূতের খপ্পরে পড়ে এখন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন মেডিকেল কলেজে । চারজন শিশুকে রাতে ঝাড়ফুঁক করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু দুইজনকে বাঁচানো যায় নি । এর আগেও বেশ কিছু গ্রামের মানুষকে ভুতে ধরেছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছে। আমরা এখন আতঙ্কিত । কদমতলী গ্রামে ভূত তাড়ানোর কি উপায় আছে সেজন্যই ঘুরে বেড়াচ্ছি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , মৃত সফিকুল আলমের বাবা রফিক আলী, পেশায় দিনমজুর। মা নাসিমা বিবি গৃহবধূ। মৃত ফিরোজ রহমানের বাবা খাবির হোসেন , পেশায় দিনমজুর। পাশাপাশি অসুস্থ কোহিনুর এবং সাবনুরের পরিবারও দিনমজুর।
এদিকে এরকম ঘটনা শুনে হতবাক বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ওই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এরকম যে কুসংস্কার রয়েছে তা জানা ছিল না। রহস্যজনকভাবে দুই শিশুর মারা গিয়েছে । আমি অসুস্থদের মেডিক্যাল কলেজে দেখে গিয়েছি । কদমতলী গ্রামে গিয়েছি। ওখানকার মানুষদের বুঝিয়েছি ভূত বলে কিছু হয় না । সবই কুসংস্কার। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে হয়তো শিশুরা প্রাণে বেঁচে যেত । জানি না ওদের পরিবার কেন এরকমটা করলো। স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য ও প্রশাসনকে বলেছি শিশু মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানার জন্য সঠিকভাবে তদন্ত করে বিষয়টি উন্মোচন করুক। নইলে গ্রামবাসীদের একাংশের মধ্যে এরকম ভ্রান্ত ধারণা থেকে যাবে। যদিও মেডিকেল কলেজ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছে, জঙ্গলে খেলার সময় হয়তো বিষাক্ত জাতীয় কোন ফল শিশুরা খেয়ে ফেলেছিল । যার কারণে শরীরে দ্রুত বিষক্রিয়ার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে। আর তা থেকেই এই ঘটনাটি ঘটেছে । কিন্তু গ্রামবাসীদের একাংশ ভুতের কথা বলেই আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে । এটা ঠিক নয় । যদি মৃত ওই দুই শিশুর ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন গাজোল থানার পুলিশ। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, গাজোলের কদমতলী গ্রামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আরও দুই শিশু অসুস্থ রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা জানতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বলা যাবে।