এই মুহূর্তে জেলা

অদম্য ইচ্ছাশক্তির জেরে, প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়ে আজ শিক্ষিকা জলি।


হুগলি,৩ ডিসেম্বর:- ছোটবেলা থেকেই ছটফটে । বাবা-মা তাই আদরের মেয়ের নাম রেখেছিলো জলি । কিন্তু কে জানত বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাসে একদিন ছটফট তো দূরের কথা সামান্য নড়াচড়ার জন্যই তাঁকে যন্ত্রের সহযোগীতা নিতে হবে ! তখন মেরেকেটে বয়স ১২কি ১৩ ।  ক্লাস সেভেনের চনমনে মেয়েটি দু’দিনের জ্বরে কাবু হয়ে পরে । সেই জ্বর-ই যে তাঁকে আর কোনদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে দেবে না তা দুঃস্বপ্ননেও কোনদিন ভাবেনি জলি ভট্টাচার্য সহ তাঁর পরিবার।  ১৯৯২ সালের সেই জ্বরে কাবু হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য শুরু হয় চেন্নাইতে দৌড়াদৌড়ি । কিন্তু প্রানে বাঁচলেও জলির দুটি পা-ই অসাড় হয়ে পরে । চলাফেরার জন্য হুইল চেয়ারই তাঁর চিরসঙ্গী হয়ে ওঠে । সেইসময় থেকেই নবজীবন শুরু হয় চুঁচুড়া ঘুটিয়াবাজার কালীতলার বাসিন্দা জলি ভট্টাচার্যের(৩৯)। প্রথম প্রথম ভেঙে পড়লেও ঘুড়ে দাঁড়ানোর একটা জেদ কোথায় জানি কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো জলিকে । সেই জেদকে পাথেয় করেই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জলি প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়ে দিয়েছে । আজ সে শিক্ষিকা । আজ সে নিজের হুইল চেয়ারে চেপে চুঁচুড়ার ব্যাস্ত রাস্তা পেরিয়া প্রায় ১৫ মিনিটের সফর করে নিজে নিজেই চুঁচুড়া পিপুলপাতি জ্ঞানাঞ্জন জুনিয়র বেসিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে যায় । এই বিদ্যালয়  কোন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের জন্য নয় । এই বিদ্যালয় সর্বসাধারনের জন্য। সেখানে সহকর্মীদের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে জলি । সহকর্মীদের মতে জলি কাজের ক্ষেত্রে আমাদের থেকেও দক্ষতা দেখায় । বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিপ্তী দাসবিশ্বাসের মতে জলির যে প্রতিবন্ধকতা আছে , সেটাই আমরা বুঝতে পারিনা , ও কারোর উপরে নির্ভরশীল নয় ! নিজের গুনে ক্ষুদে পড়ুয়াদের কাছেও প্রিয় হয়ে উঠেছে জলি। জীবনযুদ্ধে প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়ে এগিয়ে চলুক জলিরা; বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে এটাই হোক সকলের প্রার্থনা!