হাওড়া,২৮ জানুয়ারি:- আমরা মূলত পাড়ার ক্লাবে বা বারোয়ারিতে থিম পুজো দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু, বসত বাড়িতেই যদি মস্ত থিমের মন্ডপ বানিয়ে পুজো হয় তা একটু অন্য স্বাদের বইকি। হ্যাঁ, হাওড়ার সালকিয়ার দাস পরিবার গত সাত বছর ধরে বাগদেবীর পুজোয় বাড়ির মধ্যেই থিমের মন্ডপ গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোটা অঞ্চলে। বাড়ির পুজোয় যেখানে সাবেকিয়ানা দেখে আমরা অভ্যস্ত, সেখানে সরস্বতী পুজোয় বাড়ি জুড়ে থিম কেন ? পরিবারের সদস্যদের কথায়, থিমের মাধ্যমেই আমাদের বাড়ির পুজোর পরিচিতি বেড়েছে অনেকটাই। পুজোর কদর বেড়েছে গত কয়েক বছরে। বাইরে থেকেও বহু মানুষ সালকিয়ার দাসবাড়িতে ভীড় জমাচ্ছেন পুজো দেখতে। বয়সে নবীন হলেও এই বাড়ির পুজো গত কয়েক বছরে দাগ কেটেছে সাধারণ মানুষের মনে।
এর প্রধান কারণ হল এক বাড়ির পুজো হওয়া সত্ত্বেও এর উপস্থাপনা ধীরে ধীরে ক্রমেই হয়ে উঠেছে স্বতন্ত্র ও বিষয়ভিত্তিক। যা প্রতিমা দর্শনার্থীদের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে। গত বছরের এদের থিম ছিল ‘অনন্ত শান্তি”। যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এরও আগে শিশুদের নিয়ে ‘সহজ পাঠ’ থিমের উপস্থাপনা করেছিলেন এরা। যা আক্ষরিক অর্থে সহজভাবেই দর্শকদের প্রিয় হয়ে উঠেছিল । আর ঠিক একই ধারা বজায় রেখে এবারেও এক অনন্য ভাবনা নিয়ে এরা প্রস্তুত সকলকে তাক লাগিয়ে দিতে। এবার এদের থিম ‘প্রেম চিরন্তন’। থিমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তৈরি হয়েছে মন্ডপ। পুজোর মূল উদ্যোক্তা পরিবারের সদস্য তমাল দাস বলেন, বাঙালির কাছে প্রেম আর সরস্বতী পুজো এই দুই যেন একে অপরের পরিপূরক। ১৪ফেব্রুয়ারি মানে ভ্যালেনটাইন্স ডে, যেদিন সারা পৃথিবীর সাথে আমরাও প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিই, কিন্তু বাঙালির প্রেমের বাঙালিয়ানা যেন সরস্বতী পুজো ছাড়া অসম্পূর্ণ। জোর করে বিশেষ দিনে চাপিয়ে দিলেই ভালোবাসা বাড়ে না। সরস্বতী পুজোয় যে মিষ্টতা আছে তাতে এমনিই প্রেম আসে। সত্যিই সরস্বতী পূজোর দিন পাটভাঙা শাড়ি আর আনকোরা পাঞ্জাবিতেই যেন গাঢ় হয় বাঙালির প্রেম। তাই এ’বছর সরস্বতী পুজোয় আমাদের থিম ‘প্রেম চিরন্তন’। আবার ঈশ্বরের প্রতি পরম প্রেমই ভক্তি। আমার কাছে ঈশ্বর নিরাকার, তাই আমরা দেবী সরস্বতী’কে নিজেদের মতন করে দেখতে চেয়েছি। মূর্তি ভুলে সেখানে ঈশ্বরকে দেখতে চেয়েছি। এটাই ভগবানের যথার্থ উপাসনা। তমালবাবু পেশায় একজন চাকুরিজীবী ও কস্ট আ্যকাউনটেন্ট পড়ুয়া। কাজের চাপ সামলে গত প্রায় একমাস ধরে বাড়ির সদস্যদের নিয়ে বানিয়েছেন থিম। সহযোগিতায় রয়েছেন বোন সঙ্গীতা, ভাই অর্পণ এছাড়াও সুমিত, শৌণক, দেবাঞ্জন ও সুদর্শনরা। এরাই সবাই মিলে তৈরি করেছেন মন্ডপ। এদের দেবী প্রতিমার রূপদান করেছে কুমারটুলির শিল্পী দীপঙ্কর পাল। আর পাঁচটা বাড়ির মতো এদের পুজো এখন মোটেই আর বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আদতে বাড়ির পুজো হলেও প্রকৃত অর্থেই এদের পুজো এখন অন্য মাত্রা পেয়েছে।