এই মুহূর্তে জেলা

স্বামীজীর শিকাগো ধর্মসভা থেকে প্রত্যাবর্তন উৎসব পালিত হবে বেলুড় মঠে।

হাওড়া, ১৭ ফেব্রুয়ারি:- স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক কলকাতা প্রত্যাবর্তনের এবং আলমবাজার মঠে প্রথম পদার্পণের ১২৮তম বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রবিবার রাতে বেলুড় মঠে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ। সেই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মঠ কর্তৃপক্ষ জানান শিকাগো ধর্মমহাসভা তথা আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে স্বামী বিবেকানন্দের অভাবনীয় সাফল্য এবং তাঁর ভারত প্রত্যাবর্তনের পর সমগ্র দেশ তাকে যে সাদর সম্বর্ধনা জানায় তা থেকেই ভারতবর্ষের সর্বাত্মক জাগরণের সূচনা। চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর মতে, স্বামী বিবেকানন্দই হিন্দুধর্ম এবং ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ না থাকলে আমরা আমাদের ধর্ম হারাতাম এবং স্বাধীনতাও লাভ করতে পারতাম না। আমাদের সবকিছুর জন্যই আমরা তাই বিবেকানন্দের কাছে ঋণী।” তাই বিবেকানন্দের ভারতপ্রত্যাবর্তন কোন সফল ব্যক্তির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নয়। এযেন ভারতের আত্মাই আবার ফিরে এসেছিল তাঁর মাধ্যমে। পাশ্চাত্য থেকে ফেরার পর তিনি ভারতের বর্তমান ভূখণ্ডে পদার্পণ করেছিলেন ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি। তারপর তিনি দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন সর্বত্র বিজয়ী বীরের সংবর্ধনা লাভ করতে করতে।

তিনি চেন্নাই থেকে এস এস মোম্বাসা জাহাজে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন ১৫ই ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭। ১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ তারিখের মাঝরাতে তিনি বজবজ বন্দরে এসে পৌঁছন। পরদিন ১৯ শে ফেব্রুয়ারি ভোরে তিনি বজবজ বন্দরে পদার্পণ করেন এবং রেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা মত একটি স্পেশাল ট্রেনে করে বজবজ স্টেশন থেকে শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে রওনা হন। শিয়ালদহ স্টেশনে তখন সেই শীতের সকালেও সমবেত কুড়ি হাজার মানুষ। তাদের সমবেত হর্ষধ্বনির মধ্যে স্বামীজীর ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছায় সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। স্বামীজি ট্রেন থেকে নামলে যাঁরা কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে থাকেন। আর যাঁরা দূরে ছিলেন তাঁরা সমবেত কন্ঠে জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠেন: “জয় পরমহংস রামকৃষ্ণদেব কি জয়।” “জয় স্বামী বিবেকানন্দ কি জয়।” এরপর ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনরকমে স্বামীজিকে বের করে নিয়ে তাঁকে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ঘোড়ার গাড়িতে উঠানো হয়। গাড়ি ছাড়ার আগেই একদল ছাত্র এসে গাড়ির ঘোড়া খুলে দিয়ে নিজেরাই স্বামীজিকে টেনে নিয়ে চলে রিপন কলেজের (বর্তমানের সুরেন্দ্রনাথ কলেজের) দিকে। তাঁর গাড়িকে অনুসরণ করে চলল এক বিরাট শোভাযাত্রা, যার মধ্যে আছে বহু মানুষ, বেশ কয়েকটি গানের দল এবং সাড়ি দিয়ে চলা বহু ঘোড়ার গাড়ি।

রিপন কলেজে স্বামীজিকে সম্বর্ধনা দেয়া হলো। এই অভূতপূর্ণ শোভাযাত্রা ও সংবর্ধনা দেখে স্বামীজি নিজেও অভিভূত হয়ে গেছিলেন। সম্বর্ধনার উত্তরে তিনি দুই একটি ধন্যবাদ সূচক কথা বললেন মাত্র। তারপরে স্বামী যোগানন্দ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো বাগবাজারে পশুপতিনাথ বোসের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য। এখানে স্বামীজীর সঙ্গে তার কয়েকজন গুরু ভ্রাতার দেখা হয়। তাঁরা হলেন: স্বামী ব্রহ্মানন্দ, এবং কথামৃতকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত। সন্ধ্যাবেলায় স্বামীজি আলমবাজার মঠে চলে আসেন। এখানেই তখন সব সন্ন্যাসী গুরু ভাইয়েরা থাকতেন, এটাই তখন শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ। স্বামীজি যখন শেষবার ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়েছিলেন সেই সময়েই রামকৃষ্ণ মঠ বরানগর থেকে আলমবাজারে উঠে এসেছিল। তাই, বিশ্ববিজয়ী স্বামী বিবেকানন্দের আলমবাজার মঠে প্রথম পদার্পণের তারিখটিও এই ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭। এই দিন স্বামীজি কোথাও কোনো বক্তৃতা করেননি। কলকাতায় তার প্রথম বক্তৃতা ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ তারিখে শোভাবাজার রাজবাড়িতে (রাধাকান্ত দেবের বাড়িতে) এবং কলকাতায় দ্বিতীয় বক্তৃতাটি তিনি দেন ৪ মার্চ ১৮৯৭ তারিখে।

কলকাতা তখন ভারতবর্ষের রাজধানী ছিল বলে, তাঁর এই অসাধারণ দুটি বক্তৃতার প্রভাব সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতাবাসীদের অতিক্রম করে আপামর ভারতবাসীর উপরেই পড়েছিল। তাই সেই ঘটনাকে স্মরণ রাখতে আগামী ১৯ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে আমরা স্বামীজির দ্বারা মহিমান্বিত এই “১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭” দিনটি উদযাপন করা হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রথমে বজবজ স্টেশনে স্বামীজীর স্মরণে একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে। তারপর পূর্ব রেল দ্বারা ব্যবস্থাকৃত একটি স্পেশাল ট্রেন সোয়া এগারোটা নাগাদ স্বামীজীর একটি সুসজ্জিত স্ট্যাচুকে বহন করে শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সঙ্গে থাকবেন বেশকিছু সন্ন্যাসী এবং ভক্ত ও অনুরাগীবৃন্দ। শিয়ালদহ স্টেশনে সেদিন এর আগে থেকেই প্লাটফর্মের বাইরের একটি স্টেজে কলকাতা অদ্বৈত আশ্রমের পরিচালনায় স্বামীজীর স্মরণে অনুষ্ঠান হতে থাকবে। অনুষ্ঠানটি চলবে প্রায় পৌনে দুটো পর্যন্ত। ‘স্বামীজী”কে নিয়ে স্পেশাল ট্রেন শিয়ালদায় পৌছবে ১২.১৫ নাগাদ।

সেখানে স্বামীজিকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বরণ করে নেবেন সাধু-সন্ন্যাসী বৃন্দ এবং ইস্টার্ন রেলওয়ে ও কলকাতা পুলিশের আধিকারিকবৃন্দ। এরপরে সাধু সন্ন্যাসী এবং ইস্টার্ন রেলওয়ে ও কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধিবৃন্দ বাইরের স্টেজে চলে আসবেন এবং সেখানে স্বামীজিকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নিজেদের বক্তব্য রাখবেন। ঠিক দুটোর সময় শিয়ালদা স্টেশন থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি স্বামীজীর বাড়ি, বলরাম মন্দির, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ এবং উত্তর কলকাতা ও বরানগরের বিভিন্ন স্থান, যেগুলি স্বামীজীর সঙ্গে জড়িত এবং ওই অঞ্চলে অধিষ্ঠিত মঠ-মিশনের শাখাকেন্দ্রগুলিকে ছুঁয়ে এগিয়ে চলবে। শোভাযাত্রার পথে মঠ-মিশনের যে শাখা কেন্দ্রগুলি পড়বে, তাদের প্রত্যেকেই তাদের গেটের কাছে একটি অনুষ্ঠান করবে। শোভাযাত্রা সেখানে পৌঁছানোর আগে থেকেই অনুষ্ঠানটি শুরু হবে এবং শোভাযাত্রাটি পৌঁছলে তাকে করবে। শোভাযাত্রার পথের বেদপাঠ, শধ্বনি প্রভৃতির মাধ্যমে বরণ করে নেবে এবং স্বামীজিকে মাল্য প্রদান অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিও এইভাবে স্বামীজীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে। আশা করা যায় শোভাযাত্রাটি আলমবাজার মঠে পৌঁছবে সন্ধ্যা ছটা নাগাদ।

অর্থাৎ প্রায় সেই সময়ে, ১২৮ বছর আগে স্বামীজি স্বয়ং যে সময়ে আলমবাজার মঠে এসে পদার্পণ করেছিলেন। স্বামীজীর মূর্তিকে যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে আলমবাজার মঠের ভেতরে একটি স্থানে রাখা হবে। তাঁকে মাল্য প্রদান করবেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের বরিষ্ঠ সহ -সংঘাধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী ভজনানন্দজি মহারাজ, অন্যতম সহ সংঘাধ্যক্ষ গিরিশানন্দজি মহারাজ এবং সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দজী। অন্য সাধু সন্ন্যাসী এবং স্বামীজী-অনুরাগী বৃন্দও তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন। এরপর আলমবাজার মঠেরই সন্নিকটে কালীতলা মাঠে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হবে যেটির সভাপতিত্ব করবেন শ্রীমৎ স্বামী গিরিশানন্দজীমহারাজ এবং উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন শ্রীমৎ স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজ। বক্তব্য রাখবেন আরও সাধু-সন্ন্যাসী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।