এই মুহূর্তে জেলা

মহিলাদের সুস্থ রাখতে মেনস্টুয়াল কাপ ব্যবহারের পরামর্শ ভূগোল শিক্ষকের।

হুগলি, ১৩ ডিসেম্বর:- ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের এক ব্যক্তি যিনি বদলে দিয়ে ছিলেন গোটা দেশের মহিলাদের স্বাস্থ্য। দেশীয় পদ্ধতিতে সব থেকে কম খরচে স্যানিটারী ন্যাপকিন তৈরি করে দেশের প্যাডম্যান হিসেবে পরিচিত অরুণাচলম মুরুগানন্থম। ঠিক তেমনি আমাদের বাংলাতেও রয়েছে এমন এক শিক্ষক যিনি দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলার প্রত্যন্ত প্রান্তিক মহিলাদের ঋতুচক্র সম্পর্কে সচেতন করার এবং তাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন দীর্ঘকাল ধরে ভূগোলের শিক্ষক সুমন্ত বিশ্বাস। তবে এবার তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে কাজ শুরু করলেন সুমন্ত। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের কাছে এবার শুধু স্যানিটারি ন্যাপকিন নয় তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন মেনস্ট্রুয়াল কাপ। যা ঋতুচক্রের সময় মহিলাদের শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। বর্তমান সময়তেও বিভিন্ন প্রান্তিক জায়গায় মহিলাদের মনে আজও রয়েছে ঋতুচক্র নিয়ে কুসংস্কার। ২০১৮ সাল থেকে সুমন্ত ও তার ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে জেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলাদেরকে একত্রিত করে তাদেরকে বুঝিয়েছেন ঋতুচক্র বিষয় নিয়ে অন্ধবিশ্বাস না রাখার। ঋতুচক্র মহিলাদের একটি শারীরিক প্রক্রিয়া তা বুঝিয়েছেন সুমন্ত ও তার ছাত্র-ছাত্রীরা। একইসঙ্গে কেন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা প্রয়োজন সেই বিষয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ক্যাম্পও করেন এবং গ্রামের মহিলাদের হাতে স্যানেটারি ন্যাপকিন তুলে দেন সুমন্তরা।

তবে এসব তো বেশ চলছিল যতদিন না পর্যন্ত জানা গিয়েছিল নতুন এক তথ্য, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পরে তারা যখন ফেলে দেওয়া হয় তা মাটিতে মিশতে সময় নেয় বহুবছর যার ফলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে একই সঙ্গে আশঙ্কা থাকে মহিলাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার। সেই কারণেই এবারে মহিলাদের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন ভূগোলের শিক্ষক ও বাংলার প্যাডম্যান সুমন্ত। কি এই কাপ? এই কাপ হল ছোট্ট নমনীয় ফানেল আকৃতির কাপ যা মাসিকের সময় মহিলাদের কাজে লাগে আধুনিক উপকরণ হিসাবে।এটি সিলিকন বা রাবার দিয়ে তৈরি হয় যা যোনিতে ঢোকানো হয় যাতে মাসিকের রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এই কাপে অন্যান্য ধরনের ফেমিনিন হাইজিন প্রোডাক্ট যেমন স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পনের চেয়ে বেশি রক্ত ধারন করার ক্ষমতা রাখে, যার ফলে অনেক মহিলা পরিবেশ বান্ধব এই কাপ ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। 12 ঘন্টা পর্যন্ত এই কাপ শরীরে রাখা যায়। বারে বারে ন্যাপকিন বদলানোর হয়রানি থাকে না। সবচেয়ে বড়ো কথা এই কাপ অনেক সাশ্রয়ী।

তবে ব্যবহারের আগে ও পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এই বিষয়ে সুমন্ত বিশ্বাস জানান, তথ্য বলছে ঋতুকালীন সময় একজন মহিলা তার সারাজীবনে গড়ে হাজারেরও বেশি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। শুধুমাত্র ভারতেই প্রায় ১২ বিলিয়ন ন্যাপকিন ব্যবহার করা হয় আর যে কারনে ভারতে প্রতিবছর মাসিক বর্জ্যের পরিমাণ ১১৩০০ টন। এই ন্যাপকিন মাটির সাথে মিসতে ১০০বছর থেকে ৫০০ বছর পযর্ন্ত সময় লাগতে পারে। দূষণ হচ্ছে মাটির। মাসিক থেকে ছড়ানো এই দূষন কিন্তু  প্রভাব ফেলে মহিলাদের স্বাস্থ্যের উপরেও। পরবর্তীতে যেখান থেকে আসে ক্যানসারের ঝুঁকি।সাঁতার কাটা থেকে শুরু  করে ভারী শরীরচর্চা সবেতেই ব্যবহার করা যায়।রাতে শোবার সময়েও এই কাপ নিরাপদে ব্যবহার করা যায়। ন্যাপকিন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন র‍্যাশ হয় কিন্তু  এই কাপ যোনির ভেতরে থাকে তাই রেশ বেড়োনোর ভয় নেই।এই কাপ ব্যবহার অনেকের মধ্যেই নানা ভয় কাজ করে বিশেষ করে কুমারীত্ব হারানোর ভয় করে। কিন্তু  এগুলো সবই ভ্রান্ত ধারনা তাও তুলে ধরা হয়।এই কাপ কিন্তু পুনরায় ব্যবহার যোগ্য। ‘সি’ ফোল্ড করে যোনিতে প্রবেশ করাতে হয়, যা দীর্ঘক্ষন রাখা যায়। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতেই হবে। না হলে সংক্রমন ছড়িয়ে পরতে পারে।