এই মুহূর্তে জেলা

কাজে বেরিয়ে তিনদিন নিখোঁজ, পুলিশ কর্মি সুকুমারের সাহায্যে বাড়ি ফিরলেন মিনাখাঁর বৃদ্ধ।

হুগলি, ২৯ সেপ্টেম্বর:- দিন তিনেক আগে উত্তর ২৪ পরগণার মিনাখাঁ থানার মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ মৃধা মালঞ্চ বাজারে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি গাড়িতে করে দিন মজুর নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কাজের জন্য। পুষ্পা সিনেমায় এক দৃশ্যে দেখা যায় লাল চন্দন কাটতে গাড়ি করে লোক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে বেশি টাকা পাবার আশায় বিপদ আছে জেনেও ঝুৃকির গাড়িতে সওয়ার হয় পুষ্পা কারন তার টাকার দরকার।
কতকটা তেমনই পুজোর আগে কিছু টাকা পাবার আশায় মজুরদের গাড়িতে চেপে পড়েন বছর বাষট্টির গোবিন্দ। কিন্তু সেই কাজে কায়িক পরিশ্রম তার বয়স বাধা হয়। যারা কাজে নিয়ে গিয়েছিল তাঁরা তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলে। একটি গাড়ি চুঁচুড়া বয়েরমারি গ্রামে পৌঁছে দেবে বলে হুগলি জেলা সদর শহর চুঁচুড়ায় নামিয়ে দেয়। এরপর চুঁচুড়াতেই ঘুরে বেরাচ্ছিলেন বৃদ্ধা। গতকাল রাতে ঘড়ির মোরের কাছে রাস্তার পাশে শুয়ে ছিলেন।

চন্দননগর পুলিশের কনস্টেবল সুকুমার উপাধ্যায় ঘড়ির মোরের কাছেই আমরাতলা সরকারি আবাসনে থাকেন। সুকুমার এই ধরনের অসহায় মানুষের সহান হয়ে অনেক কাজ করেছেন এর আগে। তাই বৃদ্ধের কথা সুকুমারকে জানান ঘড়ির মোরের তার কয়েকজন পরিচিত। সুকুমার বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে তাকে বাড়ি নিয়ে যান। রাতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বৃদ্ধের বাড়িতে খবর দেবেন কি করে? বৃদ্ধের কাছে মোবাইল নেই বাড়ির কারো নম্বরও জানা নেই। তার সঙ্গে থাকা পুঁটুলিতে একটা প্যাকেট ছিল। তাতে একটি দোকানের নাম ও ফোন নম্বর লেখা ছিল। সু্কুমার সেই নম্বরে ফোন করেন রাত একটায়। এরকম কোনো বৃদ্ধ এলাকা থেকে নিখোঁজ আছে কিনা জানতে চান। দোকানদার জানান সকালে খোঁজ নিয়ে জানাবেন। রবিবার সকালে দোকানদার ফোন করে জানান বৃদ্ধের বাড়ি পাওয়া গেছে। পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধের ভাইপো আশিষ মৃধা পুলিশ কর্মিকে ফোন করে যোগাযোগ করেন। আজ কাকা গোবিন্দকে নিতে আসেন চু়ঁচুড়ায়। আশিষ বলেন, তিনদিব ধরে কাকা নিখোঁজ ছিলেন।কোথায় গিয়েছেন বাড়িতে বলেননি। আমরা খোঁজ চালাচ্ছিলাম।

এরমধ্যে চু়ঁচুড়া থেকে সুকুমার বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ হল। আমার কাকা একটু সহজ সরল। যেভাবে কাকাকে নিজের বাড়িতে রেখে সাহায্য করলেন ওনার উপকার ভুলব না। বৃদ্ধ বলেন, যেখানে যেতে চেয়েছিলাম সেখানে না নিয়ে গিয়ে এই চুঁচুড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল।আমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে যে ভাবে যত্ন করে মাংস ভাত খাইয়ে শুতে দিলেন নিজের মানুষও আজকাল এমন করেনা। ওনার মঙ্গল হোক। সুকুমার উপাধ্যায় বলেন, বৃদ্ধের পরিবারে আর্থিক অনটন আছে। পুজোর সময় কিছু পয়সার জন্য অজানা ঠিকানায় কাজে বেরিয়েছিলেন। এই বয়সে সেই কাজ করতে না পেরে পথ ভুলে চুঁচুড়ায় চলে আসেন। বৃদ্ধ একা কোনোদিন ট্রেনেও চাপেননি। তাই কি করে বাড়ি ফিরবে বুঝতে পারছিলে না। পরিবারের জন্য কান্নাকাটিও করছিলেন। সারারাত আমারও চিন্তায় ভালো ঘুম হয়নি। পরে যোগাযোগ হয় ওর বাড়িতে। ভাইপোর সঙ্গে বৃদ্ধ বাড়ি ফিরে গেলো হাসি মুখে এটাই বড় প্রাপ্তি।