এই মুহূর্তে জেলা

ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলে পাটকাঠির পাঠশালায় ছোটদের পড়ান সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরালাল।

হুগলি, ২৩ সেপ্টেম্বর:- আর জি কর কান্ডে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক নেগেটিভ প্রচার হয়েছে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের নিয়ে।তবে এই ছবি টা একেবারেই উল্টো। হীরার পাঠশালায় শিখছে পড়ছে ছোটোরা, বলাগড়ের সিভিক ভলেন্টিয়ারের কাজের প্রশংসায় পুলিশ। শিক্ষক হীরালালের হাত ধরে আরো একটু ভালো করে শিখছে কচিকাঁচারা, ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলে পাটকাঠির পাঠাশালায় ছোটোদের পড়ান সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরালাল সরকার।হুগলির বলাগড়ের নাটাগড়ে এস টি কে কে রোডের উপর প্রতিদিন তাকে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাতে হয়। রোদ, জল উপেক্ষা করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করেন, মানুষকে রাস্তা পারাপার করতে সাহায্য করেন। নাটাগড় এলাকাটি মূলত আদিবাসী মানুষের বাস। সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখার অনেকেরই সমর্থ্য নেই। সেই সমস্ত পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পাঠদেন সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরা। রাস্তার পাশেই পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরি করেছেন একটি চালা ঘর। সেখানেই প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পড়ুয়া স্কুলে যাবার আগে তার কাছে পড়াশোনা শিখতে আসে।

কিছুটা সময় লেখাপড়া করিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের হাত ধরে রাস্তা পার করে স্কুলে যেতে সাহায্য করেন হীরা। হীরার পাঠশালা নামে পরিচিত হয়েছে এই পাটকাঠির ঘর। স্কুলে মিড ডে মিল পায় পড়ুয়ারা। হীরার পাঠাশালায় পড়া শেষে পড়ুয়ারা পায় বিস্কুট আর লজেন্স। তাতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে খুদেরা। ২০১০ সালে বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন হীরালাল সরকার। এরপর হুগলি গ্রামীণ পুলিশের বলাগড় থানার সিভিক ভলেন্টিয়ারের কাজ পান। সকালে ট্রফিকের দায়িত্ব সামলে বিকেলে বাবার সব্জির ব্যবসায় হাত লাগান। তবে নিজের দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল থাকেন।এক সময় ভালো ক্রিকেট খেলতেন। স্থানীয় বাসিন্দা পাপিয়া সরেন, প্রিয়াঙ্কা মান্ডিরা জানান, রোজ সকাল হলেই মেয়েকে হীরাদার পাঠাশালায় পড়তে দিয়ে যান।ভালো পড়ান তিনি। ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলানোর ফাঁকেই বাচ্চাদের পড়াশোনা শেখানো। সবার সঙ্গে হাসিমুখে সম্মান দিয়ে কথা বলে। তিনি চান বাচ্চারা শিক্ষিত হোক। বাচ্চাদের স্নেহ করেন, যত্ন করে পড়াশোনা শেখান। হীরালাল বলেন, এই এলাকা সবটাই আদিবাসী অধ্যুষিত। অনেকেই মনে করেন এরা পিছিয়ে পড়া মানুষ।

আমি যেহেতু এখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছি তাই কাজের ফাঁকেই তাদের পড়াশোনাটা একটু দেখিয়ে দিই। তাতে তারা কিছুটা হলেও শিখতে পারে। যারা প্রাইভেট পড়তে দিতে পারেনা তাদের ছেলে মেয়েদের আমি শিখিয়ে দিই। মূলত তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতেই আমার এই উদ্যোগ। সমাজের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে ভালো লাগে। হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি ক্রাইম অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্র বলেন, সবাই খারাপ হয় না সেটা হীরালাল কে দেখলেও বোঝা যায়। ও চেষ্টা করছে ছোটোদের শিক্ষিত করার। কিছু পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর এই চেষ্টাটাই তো মহৎ। ও গত ছয় মাস ধরে নিজের চেষ্টায় এই পাঠশালা গড়ে তুলেছে। উদ্দেশ্যই হলো ছোটোদের শিক্ষিত করা। আমরা ওর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।হুগলি গ্রামীণ পুলিশের সুপার কামনাশীষ সেন নিজেও এই ধরনের কাজ পছন্দ করেন। তাই গ্রামীণ পুলিশের পক্ষ থেকে হীরাকে শুভেচ্ছা জানাই। ওসি বলাগড় রাজকিরণ মুখোপাধ্যায়, সিআই মগড়া সৌমেন বিশ্বাস ও ডিএসপি ক্রাইম হীরালালকে তার কাজের জন্য থানায় ডেকে সম্বর্ধনা দেন।