কলকাতা, ১ জুন:- শেষ হল রাজ্যের সুদীর্ঘ সাত দফার নির্বাচন পর্ব।সারা দেশের পাশাপাশি ভোট সপ্তমিতে এদিন রাজ্যের ৯টি আসনে হয়েছে ভোটগ্রহন। বারাসাত, বসিরহাট, ডায়মন্ড হারবার, দমদম, যাদবপুর, জয়নগর, দক্ষিণ ৭ কলকাতা, উত্তর ৭ কলকাতা এবং মথুরাপুরে হয়েছে শেষ দফায় লোকসভা নির্বাচন। বরানগরে উপনির্বাচন হয়েছে। সকাল ৭ টা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণ পর্ব।ছে। কমিশন সূত্রের খবর, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বাংলায় গড় ভোটের হার ৬৯.৮৯ শতাংশ। কমিশনের প্রকাশিত ভোটের হারে শীর্ষে রয়েছে বসিরহাট। সেখানে ভোটের হার ৭৬.৫৬ শতাংশ। আর ভোটের হারে সব থেকে কম পড়েছে উত্তর কলকাতা। সেখানে ভোটের হার ৫৯.২৩।শেষ দফায় নির্বাচন।দিনের নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, মালা রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার সহ বিভিন্ন শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবর্গ। পাশাপাশি বিজেপির প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন তাপস রায়, রেখা পাত্র, স্বপন মজুমদার সহ বিভিন্ন নেতারা। এদিকে শুক্রবার রাত থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠেছিল। শনিবার ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই অভিযোগের পরিমান ও তীব্রতা দুইই বাড়তে থাকে। শেষ দফা লোকসভা নির্বাচনে প্রথম থেকেই অশান্তির চিত্র দেখা গিয়েছিল ভাঙড়ে। দিনভর সেখানে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষের চিত্র উঠে এসেছে। এরপর সন্দেশখালিতে দেখা গিয়েছে অশান্তির ছবি।
এদিন বিজেপি কর্মী- সমর্থকেরা বয়ারমারির বাসন্তী সড়ক অবরোধ করেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। পুলিশের সঙ্গে বচসাতেও জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় রেখাকে। তবে বলা বাহুল্য, এই দুটি কেন্দ্র ছাড়া রাজ্যের বাকি ৭ টি আসনে সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবেই সমাপ্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গিয়েপ্রার্থী এবং পার্টি কর্মীদের মারধর ও হেনস্থা, বুথ এজেন্টকে বসতে না দেওয়া, ভুয়ো ভোটার, ভোটারদের বাধা দেওয়া, ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টার মতো একাধিক অভিযোগকে ঘিরে উত্তপ্ত ছিল বসিরহাট, ভাঙ্গর, ক্যানিং, বারুইপুর এবং অন্যান্য অঞ্চল। অভিযোগ কোথাও আবার পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন একাধিক ব্যক্তি। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের জেরে আক্রান্তদের গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে।ভাঙড়ের সংর্ষের জেরে আহত হন ৭০ এবং ৭১ নম্বর বুথের দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুলিশের কর্মী এমআই খান। সাতুলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা বুথে সেক্টর অফিসারের দায়িত্ব ছিলেন তিনি। তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাংলায় সপ্তম দফা নির্বাচনে দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ। চলতি লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন দফায় ভোটের সময় বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠে মিলেছে। শান্তিপূর্ণ ভোট করানো উদ্দেশ্যে শেষ দফা নির্বাচনে রাজ্যে ৯৬৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ২৯৫৮টি কুইক রেস্পন্স টিম মোতায়েন করা হয়েছিল। বরাগনগরে উপ নির্বাচনের সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যকে শারীরিক হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল অন্যদিকে পাল্টা দাবি করেছে, ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছিল। কলকাতা দক্ষিণের ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর মেয়ে রোশেনারা মিশ্রকে বুথে ভিতর হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় একটি পোলিং বুথে যাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, বিজেপি ছাপ্পা ভোট দিচ্ছে। এই বিক্ষোভকে ঘিরে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই এলাকা।ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ অস্বীকার করে বর্ষীয়ান নেতা তাপস রায় বলেন, “প্রক্সি ভোটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
বুথের ভিতরে তো এজেন্টরা উপস্থিত রয়েছেন।” দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলতলিতে উত্তেজিত জনতা ভোটকেন্দ্রে ঢুকে একটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাজেয়াপ্ত করে পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। পোলিং এজেন্টকে বুথে ঢুকতে বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিএটি) সজ্জিত ইভিএম বাজেয়াপ্ত করে জলে ফেলে দেওয়া হয় বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে এই ঘটনায় সেক্টর অফিসার এফআইআর দায়ের করেছেন। ভোটে অশান্তির অভিযোগকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ শাসকদলের নেত্রী ও মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “বিরোধীরা এমন অভিযোগ করেই থাকে। এত বুথে ভোট হচ্ছে। কোথাও দু’-একটা বুথে কিছু হয়ে থাকলে সেটা (ভোটের) সামগ্রিক চিত্র নয়।” অন্যদিকে, শনিবার ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন বুথ ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় ভোটপ্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ তোলেন বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস। তার অভিযোগ এভাবে “ছাপ্পা ভোট” দিয়ে তৃণমূল জেতার চেষ্টা করছে।