নদীয়া, ২২ জানুয়ারি:- আজ মহাসমারোহে উদ্বোধন হতে চলেছে অযোধ্যায় রাম মন্দির। অথচ বাঙালি তথা নদীয়াবাসির আবেগ কবি কৃত্তিবাস রচিত রামায়ণের মূল পান্ডুলিপি আজও ফ্রান্সে। উপেক্ষা আর অবহেলায় লালিত কৃত্তিবাসী রামায়ণ রচয়িতার রচনাস্থল।
ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের অনেক আগেই আমাদের গর্বের আবেগের কৃত্তিবাস ওঝার হাতে লেখা কৃত্তিবাসী রামায়ণ চলে গিয়েছিল ফরাসি ঔপনিবেশিকদের হাতে। ১৭৯৪ সালে ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগার বিবলিওথেক ন্যাশনালে এই পাণ্ডুলিপিটি ক্যাটালগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে ফুলিয়ায় বয়রার সংগ্রহশালায় কবি কৃত্তিবাস ওঝার হাতে রচিত রামায়ণের মূল পাণ্ডুলিপির মাইক্রোফিল্ম ও সেই পাণ্ডুলিপির ফটোকপি রক্ষিত রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের ৭৬ বছর পরেও কেন্দ্রের কোন সরকার আজ পর্যন্ত তৎপর হয়নি বাঙালির শিকড় কৃত্তিবাসের স্বহস্তে রচিত কৃত্তিবাসী রামায়ণ দেশে ফিরিয়ে আনার। আজ যখন কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি সরকারের তৎপরতায় ঘটা করে অযোধ্যায় রামলালার মন্দির উদ্বোধন হচ্ছে তখনও কৃত্তিবাসী রামায়ণ ফ্রান্স থেকে ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।
উপেক্ষিতই থেকে গেল বাঙালির আবেগ। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে কৃত্তিবাসের স্মরণে ফুলিয়ার বয়রায় একটি গ্রন্থাগার তথা কমিউনিটি হল তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার।১৯৬৭ সালে গ্রন্থাগারটি খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। সেখানে ১৪ টি ভাষায় রামায়ণের অনুবাদ রয়েছে। আছে কৃত্তিবাসের স্বহস্তে রচিত রামায়ণের পান্ডুলিপির সেই ফটোকপি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ, বাংলায় রামায়ণের রচয়িতা কৃত্তিবাস ওঝার স্মৃতিতে তৈরি সেই লাইব্রেরিও বর্তমানে অবহেলিত। লাইব্রেরীর আশেপাশে নোংরা আবর্জনায় ভর্তি। অবহেলার চিহ্ন চারিদিকে। সপ্তাহে মাত্র দু’দিন, শুক্র ও শনিবার একজন গ্রন্থাগারিক খোলা রাখেন ঐ লাইব্রেরী ও সংগ্রহশালা। আরও একজন সপ্তাহে দু’দিন আসেন, কিন্তু এতকিছু বাইরে থেকে যারা আসেন তাদের পক্ষে জেনে আসা সম্ভব নয়। স্বাভাবিক ভাবেই কৃত্তিবাস নামাঙ্কিত গ্রন্থাগারটিতে রক্ষিত অমূল্য সব বই পড়তে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রাজ্য সরকারও উদাসীন বাঙালির এই আবাগের স্থানটি নিয়ে? নাকি সবটাই শুধু রাজনীতি, বাঙালির আবেগ বা বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ও গরিমা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই কোনো সরকারের।