শান্তিপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর:- বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর এই দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন বনেদী বাড়ি এবং বারোয়ারী মেতে ওঠে পূজা আনন্দে। বারোয়ারিতে বা ক্লাবে থিমের ছোঁয়া, সঙ্গে বিভিন্ন রকম জউলুষে ভরা। তবে দূর্গাপূজা বলতে বাংলার আপামর বনেদি বাড়ির পুজো গুলি নিষ্ঠা এবং বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু। সেরকমই এক বনেদি বাড়ির কথা আজ বলবো, নদীয়ার শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ির, আনুমানিক প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো দেবী কাত্যায়নীর পুজো চলে আসছে নিয়ম নিষ্ঠার সাথে। এখানে দেবী কাত্যায়নী রূপে পুজিত হন। দেবীর মূর্তিতেও রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য দুর্গা প্রতিমা যেরকম আমরা দেখি, বাড়ির দুর্গা প্রতিমা যেরকম দেখি, সেরকমটি নয় এখানে। দেবী মূর্তির দুটি হাত বড়, অর্থাৎ এই দুটি হাত দিয়েই সংহারের কথা বোঝানো হয়েছে। কিন্তু বাকি আটটি হাত অনেকটাই ছোট। বড় গোস্বামী বাড়ির সদস্যদের মতে এই পুজো আনুমানিক ৪০০ বছর ধরে নিয়ম নিষ্ঠার সাথে চলে আসছে। এই পুজোর ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে গেলে তারা জানান, একদিন তাদের ইষ্ট দেব রাধারমন হঠাৎ মন্দির থেকে অন্তর্দান হয়ে যান। তারপর বাড়ির গৃহকর্তীরা বাড়ির মন্দিরের উঠোনে বসে দেবি কাত্যায়নির ব্রত পালন করতে থাকেন। এরপর তিনদিন পর বাড়ির যিনি জ্যেষ্ঠ কর্তি তাকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, রাধারমন মূর্তি কোথায় রয়েছে।
তারপরেই পাওয়া যায় তাদের ইষ্টদেব রাধারমনের মূর্তি এরপর থেকেই দেবির পুজো শুরু হয় নদীয়ার শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়িতে। একেবারেই জৌলুসহীন এই পুজো। এই পুজোতে সাবেকি মাতৃমূর্তি এবং নিয়মনিষ্ঠাই একমাত্র অবলম্বন। দেবী মূর্তির আরেকটি বিশেষ দিক লক্ষ্য করা যায়, এখানে দেবীর সন্তান কার্তিক এবং গণেশ বিপরীত স্থান এ অবস্থান করেন। তবে নবপত্রিকা বসানো হয় সঠিক থানেই। অর্থাৎ কার্তিকের পাশে বসে নবপত্রিকা। কর্মক্ষেত্র কিংবা অন্যান্য কাজে বাড়ির যে সমস্ত সদস্যরা বাড়ির বাইরে থাকেন, তারা পুজোর ওই চার দিন দেবি কাত্যায়নির পুজোতে মেতে ওঠে। আরো জানা যায় নবমীতে দেশবাসী তথা রাজ্যবাসীর জন্য বিশেষ মঙ্গল কামনা করা হয়। দেবীর কাছে পুজোতে এলাকার মানুষদের খাওয়ানো হয় ভোগ। তবে ভোগ রান্নাতেও রয়েছে আকর্ষণ, যে সমস্ত বিবাহিত মহিলারা দীক্ষিত তারাই দেবীকাত্যায়ণীর ভোগ রান্নার কাজে নিযুক্ত হন, এবং যে সমস্ত মেয়েরা অবিবাহিত তারা দেবীর অন্যান্য পূজার সামগ্রী কাজে নিযুক্ত থাকেন ।তবে আধুনিক যুগে আধুনিক পূজার সাথে বনেদি আনার মেলবন্ধন কতটা সামঞ্জস্য বা কিভাবে দেখছে, বড় গোস্বামী বাড়ির এযুগের সন্তানরা এ প্রশ্ন তাদেরকে করা হলে তারা জানান, নিয়ম নিষ্ঠা এবং ভক্তি এটি এই বাড়ির মূল উদ্দেশ্য। আর তাতেই দেবি কাত্যায়নির পুজো তে তারা অংশগ্রহণ করেন এবং মেতে ওঠেন আজ থেকে ৪০০ বছরের ইতিহাস প্রসিদ্ধ সেই পুজোয়।