কলকাতা, ৬ সেপ্টেম্বর:- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে নতুন করে ৮৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণার পরদিনই প্রাথমিকে মোট শূন্য পদ জানতে চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়েছে।প্রতিটি জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কত সংখ্যক শিক্ষাক পদ শূন্য রয়েছে সেব্যাপের সংশ্লিষ্ট বিদ্য়ালয় পরিদর্শকদের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে জানাতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যে প্রাথমিক স্তরে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি শূন্য শিক্ষক পদ রয়েছে। সেই সংখ্যা দ্বিগুন থেকে তিনগুন বাড়তে পারে।আগামী শুক্রবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অন্তর্বর্তী কমিটির বৈঠক রয়েছে। তার আগেই জেলা গুলিকে শূণ্যপদের তালিকা জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই যাঁরা টেট উত্তীর্ণ হয়েছেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে তাঁরা আবেদন করতে পারবেন৷ শূন্য পদের নির্দিষ্ট তালিকা হাতে পেলেই দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে৷ এদিকে সব ঠিক থাকলে পুজোর আগেই রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য টেট পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। সেক্ষেত্রে চলতি বছরে নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই আরেকবার টেট পরীক্ষা নেওয়ার পর্ব সেরে ফেলতে পারে রাজ্য সরকার। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদে দায়িত্বভার নেওয়ার পরই গৌতম পাল জানিয়েছিলেন এবার থেকে প্রতি বছর টেট পরীক্ষা বা প্রাথমিকে শিক্ষক পদে যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা নেওয়া হবে।
সেই ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যেই এবার রাজ্যের প্রতিটি জেলার প্রাথমিক স্কুল পর্ষদগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে দিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে জানাতে হবে জেলায় পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সঠিক পরিকাঠামো আছে কিনা। সেই সঙ্গে পাঠাতে বলা হয়েছে জেলায় থাকা পরীক্ষাকেন্দ্রের তালিকাও। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে পর্ষদ। আর তার পরেই জোর জল্পনা ডানা মেলেছে যে পুজোর আগেই সম্ভবত টেট পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিতে চলেছেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সূত্রে জানা গিয়েছে, পরবর্তী টেট নেওয়ার জন্য রীতিমত তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে পর্ষদের অন্দরে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে দায়িত্ব নিয়েই গৌতমবাবু জানিয়েছিলেন, ‘সব কিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে এ বার। প্রতি বছর টেট হবে, রেজাল্ট বেরোবে, চাকরিও হবে। চেষ্টা করব যেন কোনও অভিযোগ না থাকে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য গ্রিভান্স সেলও খোলা হবে।’ এবার সেই বক্তব্য মোতাবেকই পর্ষদ টেট পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিল বলেই মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি।
দুর্নীতি সরিয়ে স্বচ্ছতা ফেরাতে মরিয়া রাজ্য সরকারও। এর মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট ১১ বছর ধরে পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব সামলানো তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করেছে। গত ২০ জুন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে ওই পদ থেকে অপসারিত করেন। আদালতের নির্দেশে অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন রত্না চক্রবর্তী বাগচী। তার পরই গৌতমবাবুকে নিয়োগ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার পর্ষদে ১১ সদস্যের অ্যাড হক কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটিতে রয়েছেন লেখক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, ভাষা শিক্ষিকা স্বাতী গুহ, উচ্চ শিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান কৌশিকি দাশগুপ্ত, সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার এবং অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তীর মতো বিশিষ্টজনেরা। সেই কমিটি আবার রীতিমত প্রশংসা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের সাড়া জাগানো বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অভীক মজুমদারের মতো ব্যক্তিরা আছেন অ্যাড হক কমিটিতে। বর্তমান চেয়ারম্যানও ভাল। কোনও পুরসভার চেয়ারম্যানের মতো নয়। আশা রাখছি, আস্তে আস্তে পরিবর্তন হবে। একটা সময় আমিও পর্ষদের হয়ে কাজ করেছি। সবটা চিনি। এখনকার অবস্থা দেখলে খুবই খারাপ লাগে। এখন সেখানেই আমাকে সিআরপিএফ ঢোকাতে হল। আমি মনে করি তখন স্বচ্ছতা ছিল, দুর্নীতি ছিল না।’ আর তাই এবারের টেট পরীক্ষা ঘিরে ফের আশায় বুক বাঁধছে পরীক্ষার্থীরা।