সুদীপ দাস, ২৪ আগস্ট:- আবারও বাজিমাত অভিজ্ঞানের। জাতীয় দ্বাদশ বিজ্ঞান চলচিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হল হুগলির কিশোরের তথ্যচিত্র। ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক আয়োজিত দ্বাদশ জাতীয় বিজ্ঞান চলচ্চিত্র উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হল গত সোমবার মধ্যপ্রদেশের ভোপালে। চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। এই উৎসবে আজ বুধবার দেখানো হল হুগলি কলিজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র অভিজ্ঞান কিশোর দাসের পরিচালিত তথ্যচিত্র “আধুনিক ভারতের সুশ্রুত – পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত”। সারা দেশ থেকে ২৫০টিরও বেশি বিজ্ঞান-নির্ভর চলচ্চিত্র থেকে বেছে নেওয়া মাত্র ৭১টি চলচিত্রের মধ্যে স্থান পেয়েছে অভিজ্ঞানের এই তথ্যচিত্রটি। পন্ডিত মধুসূদন গুপ্তর জীবনীর ওপর নির্মিত এই চলচিত্রটি ইতিমধ্যে একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এবং পুরস্কৃত হয়েছে। গত বছর গোয়াতে অনুষ্ঠিত ভারত সরকারের সপ্তম আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান চলচিত্র উৎসবে সেরা পনেরোটি চলচিত্রের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছিল তার এই তথ্যচিত্রটি। পন্ডিত মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন বাঙালি হিন্দু বৈদ্য পরিবারের একজন আয়ুর্বেদিক শল্যচিকিৎসক। তিনি ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে ১০ই জানুয়ারি মহর্ষি সুশ্রুতের তিন হাজার বছর পর ভারতীয় হিসেবে প্রথম পাশ্চাত্যরীতিতে শব ব্যবচ্ছেদ করেন। পন্ডিত গুপ্তের জীবন ও তাঁর সংগ্রামকে এই ছবির মাধ্যমে অত্যন্ত তথ্যপূর্ণ এবং সুস্পষ্টভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। তাঁর শৈশব থেকে শুরু করে অকাল মৃত্যু পর্যন্ত – সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং তথ্য সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এই তথ্যচিত্রটিতে।
কলকাতার জনস্বাস্থ্য, পানীয় জলের স্বচ্ছতা, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা, টিকাকরণের ব্যবস্থা প্রভৃতি জনসমস্যা বিষয়ে তাঁর বিশেষ নজর ছিল। কমিটিতে সে বিষয়ে তিনি মূল্যবান পরামর্শও দিয়েছিলেন। নিজে ছিলেন ডায়াবেটিক রোগী। কিন্তু বারণ না শুনে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও অনবরত শবব্যবচ্ছেদ করতেন অন্যদের একাজে সাহস যোগাতে। জীবাণু সংক্রমণে ডায়াবেটিক সেপ্টিসিমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে ১৮৫৬ সালের ১৫ই নভেম্বর এই মহাপ্রাণের মৃত্যু হয়। অভিজ্ঞান জানায় রেনবো বিভাগে ৫টি বেছে নেওয়া চলচিত্রের মধ্যে একমাত্র সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় নির্মিত তার এই তথ্যচিত্রটি। সারাদেশে সরকারিভাবে এখন পালিত হচ্ছে আজাদী কা অমৃত মহোৎসব। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এই তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছে বলে অভিজ্ঞান জানায়। তার মতে স্বাধীনতা সংগ্রামে যে শুধু বিপ্লবীদেরই ভূমিকা ছিল তা নয়, অনেক বিজ্ঞানী বা পন্ডিত গুপ্তর মতন চিকিৎসকেরাও ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সদর্থক ভূমিকা পালন করেছিলেন। হুগলি কলিজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র খুব আশাবাদী যে তার নির্মিত তথ্যচিত্র সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ বিচারকদেরও মন জয় করতে পারবে। অভিজ্ঞানের এই স্বীকৃতিতে গর্বিত তার বাবা অনিন্দ্য বাবু জানান — এর আগেও সে একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে তার বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনের জন্য। সম্প্রতি তার এক আবিষ্কার ভারত সরকারের থেকে পেটেণ্টও লাভ করেছে।