কলকাতা, ৯ মে:- গরীবের আলুসেদ্ধ ভাতের স্বপ্নও ক্রমশ পরিণত হচ্ছে বিলাসিতায়! কারণ আলুর দামের পারদ কেওমশই চড়ছে। সে চন্দ্রমুখী হোক কিংবা জ্যোতি, বাজারে আলুর দামে ভিরমি খাচ্ছেন সাধারণ। হতবাক বিক্রেতারাও। চলতি সপ্তাহের শেষ দু থেকে তিনদিনের জ্যোতি আলুর দাম একেবারে লাফিয়ে বেড়েছে ৬টাকা। চন্দ্রমুখী আলুর দাম বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকায়। আগামী দিনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমত অবস্থায় মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজছে রাজ্য সরকার। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে নবান্ন। খুব শিঘ্রই এই বিষয়ে কিছু পদক্ষেপের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। কেন বাড়ছে আলুর দাম? আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজ্যে প্রতি বছর এক কোটি ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আলুর ফলন হয়। তবে এবার তা কমে ৮০ লক্ষ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। খামখেয়ালি আবহাওয়ার জন্য এ বছর রাজ্যে আলুর ফলন কম হয়েছে।
আলু বীজ রোপনের সময় অকাল বৃষ্টির জল জমিতে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় আলুর বীজ ও গাছ নষ্ট হয়। ফের নতুন করে আলু জমি তৈরি করে আলু বসাতে হয় কৃষকদের। পাশাপশি পেট্রোল ডিজেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে সমস্ত জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আলু তার ব্যতিক্রম নয়। এখন যে আলু পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগটাই মাঠ থেকে সরাসরি বাজারে আসছে। দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ হিমঘর এখনও খোলেনি। ফলে সেখানে মজুত রাখা আলু বাজারে ঢোকেনি। সেই আলু বাজারে এলে প্রাথমিক ভাবে দাম কিছুটা বাড়বে। কারণ, দামের সঙ্গে যুক্ত হয় হিমঘরের ভাড়া সহ অন্যান্য কয়েকটি খাতের খরচ। তবে বাজারে যোগান বাড়লে কয়েকদিন পর আবার দাম কিছুটা কমতে পারে। হিমঘর মালিকদের সংগঠনের কর্তা পতিতপাবন দে জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বেশিরভাগ হিমঘর খুলে যাবে। বাজারে ঢুকবে মজুত রাখা আলু। কি ভাবছে রাজ্য সরকার? রাজ্য সরকারের বাজার সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন,
কলকাতার পাইকারি বাজারে আলুর দাম হঠাৎই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে কৃত্রিম ভাবে দাম না বাড়ানো হয় সেজন্য বাজারে বাজারে অভিযান চলছে। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এবার হিমঘরে আলু মজুত করার সময় কেজিতে ১৮ টাকা মতো খরচ হয়েছে। হিমঘরের ভাড়া সহ অন্যান্য খাতে খরচ হবে আরও ৬-৭ টাকা। এবার হিমঘরের ভাড়া বেড়েছে। এর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ১০ মে ব্যবসা বন্ধের ডাক দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, হিমঘর থেকে আলু বের করার সময় সব মিলিয়ে কেজি পিছু ২৬ টাকার আশপাশে খরচ পড়বে। সেই অনুপাতে দাম বাড়বে খুচরো বাজারে। তাছাড়া এবার আবহাওয়াজনিত কারণে দক্ষিণবঙ্গে আলুর ফলন মার খেয়েছে। চন্দ্রমুখী আলুর ফলন তো খুবই কম। উত্তরবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আলু এনেও দক্ষিণবঙ্গের হিমঘরগুলির ধারণ ক্ষমতার ২০ শতাংশ পূরণ করা যায়নি।