এই মুহূর্তে জেলা

আরামবাগের দয়াময়ী মা কালীর প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে লুকিয়ে আছে নানা ইতিহাস।

মহেশ্বর চক্রবর্তী, ২৯ অক্টোবর:- হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালিপুজো হলো আরামবাগের কালিপুরের বড়ো মা তথা দয়াময়ী মা কালির পুজো।এই বড়ো মা কালির প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র নানা ঘটনা লুকিয়ে আছে।আজ সেই প্রাচীন ঘটনার কথাই আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে এই বড়ো মা কালির প্রতিষ্ঠা হয়। সেই সময় আরামবাগের বদলে জাহানাবাদ নামে একটি জনপদ দ্বারকেশ্বর নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছিলো। চারিদিকে জঙ্গলে ঘেরা ছোট জনপদ। মাঝখান দিয়ে দ্বারকেশ্বর নদী বয়ে চলেছে। জানা যায়, বর্ধমানের রাজা প্রতিষ্ঠিত এই বড়ো মা কালি বর্ধমানে ছিলো।স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজারাম ব্রহ্মচারী এবং সদারাম ব্রহ্মচারী নামে দুই সিদ্ধ্য পুরুষ বর্ধমানের রাজার কাছ থেকে এই বড়ো মা কে কাঁধে করে দ্বারকেশ্বর নদী পেড়িয়ে এই নদীপাড়ের জঙ্গল ঘেরা জায়গায় প্রতিষ্ঠা করেন।জাহানাবাদ জনপদে প্রতিষ্ঠিত হয় বড়ো মার। এই বড়ো মা কালির নাম অনুসারে দ্বারকেশ্বর নদী পাড়ের ওই ছোট জনপদের নাম হলো কালিপুর। এমনটাই জানালেন মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত ঠাকুর।

তিনি আরও জানান,বড় মায়ের এই পূজোটি বছরে তিনবার হয়ে থাকে। একবার পুজো হয় কার্তিক মাসের অমাবস্যাতে, দ্বিতীয় বার হয় মকর সংক্রান্তি দিন এবং সেই দিন মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। এবং তৃতীয়বার পুজোটি হয় আরামবাগ শ্রী শ্রী রক্ষা কালী মায়ের বারোয়ারি পুজোর সময়। সিদ্ধ্য পুরুষ রাজারামপুর ব্রহ্মচারী এবং সদরাম ব্রহ্মচারীর দাঁতন থেকে একটা নিম গাছের সৃষ্টি হয়। সেই নিম গাছের নিচেই দুই ব্রহ্মচারীর সমাধি এখনো জ্বলজ্বল করছে। বট ও নিম গাছের নিচে রয়েছে দেবাদিদেব মহাদেবের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।নিয়ম করে এখনও নিত্যদিন দেবাদিদেব মহেশ্বর ও দুই ব্রক্ষ্মচারীর পুজো হয়।পাশাপাশি বড়ো মা কালিরও নিত্যদিন পুজোপাঠ করেন পুরোহিত ঠাকুর। বড় মায়ের এই মন্দিরে দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষেরা আসেন মায়ের স্নান জল খেতে। সমস্যার সমাধানে মানত করেন বহু মানুষ। তাদের দুরারোগ্য ব্যধী নাকি ভালো হয়।

নিত্যদিন তাই বহু ভক্তের সমাগম হয় আরামবাগের কালিপুরের এই বড়ো মা কালির মন্দিরে। এই বিষয়ে মা কালির মন্দিরে আসা রুমপা পন্ডিত বলেন, নিত্যদিন বহু দুর দুরান্ত থেকে ভক্তরা মায়ের মন্দিরে আসেন।তাদের মনস্কামনা পুরোন হয়। মায়ের আশীর্বাদে আমি খুবই উপকৃত। অন্যদিকে এই মন্দিরের পুরোহিত ঠাকুর সুব্রত মিশ্র আরও জানান, বড়ো মা কালির নাম অনুসারে এই কালিপুর জনপদের নাম হয়। দুই ব্রম্মচারী এই মায়ের প্রতিষ্ঠা করেন।মায়ের কৃপায় বহু মানুষের রোগমুক্তি হয়েছে। সবমিলিয়ে আরামবাগের ওপর দিয়ে প্রভাবিত দ্বারকেশ্বর নদীর পাড়ে কালিপুর জনপদে প্রতিষ্ঠিত আছেন জাগ্রত বড়ো মা কালির মন্দির। নিত্যদিন মায়ের মন্দিরে অসংখ্য ভক্তের সমাগম হলেও কাত্তিক মাসে শ্যামাকালি রুপে বিশেষ পুজোপাঠ হয় এবং বছরের তিনবার বিশেষ দিনে চলে মায়ের সবার আগে আরাধনা হয়। যা আজও রীতি মেনে হয়ে আসছে।