এই মুহূর্তে জেলা

শ্রীরামকৃষ্ণের ডাক্তারের বাড়ির কালীপুজোকে ঘিরে রয়েছে নানা ঘটনা।


মহেশ্বর চক্রবর্তী, ২৭ অক্টোবর:- সারা বাংলা জুড়ে শক্তির দেবী মা কালীকে নিয়ে কত প্রাচীন ও ঐতিহাসিক আধ্যাত্নিক ঘটনা জড়িত হয়ে আছে। ভারতবর্ষে অন্যতম পুর্নভুমি হুগলি জেলার কামারপুকুর। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন এই পুর্নভুমিতে। মা কালীর আশীর্বাদধন্য ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মভূমিতে মা কালির কত লীলা সংঘটিত হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের ডাক্তারের বাড়ির কালীপুজোকে ঘিরে রয়েছে নানা ঘটনা। কথিত আছে কামারপুকুরের শ্রীপুরের বসবাস করতেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ডাক্তার তথা তৎকালীন যুগের বৈদ্য রামতারক গুপ্ত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কালীপুজোর মায়ের মুখে লেগে থাকতে দেখা গিয়েছিলো রক্ত। স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, রামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসক ছিলেন রামতারক গুপ্ত। তাঁর পরিবারের কালীপুজো প্রায় ৩০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, কামারপুকুর এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন এবং জাগ্রত শ্রীপুরের বৈদ্যবাড়ির কালী। মা এখানে চামুণ্ডা রূপিনী। মায়ের পা, কোমর শিকল দিয়ে বাঁধা থাকে। তবে বর্তমান প্রজন্মের আমলে এই মা কালীর কোমরে লোহার শিকলের পরিবর্তে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। এই বিষয়ে এই বৈদ্য বংশের এক বংশধর জানান, এক আসনেই প্রান প্রতিষ্ঠা আর এক আসনেই বিসর্জন।

তাঁর আরও দাবী, পুজোর দিন কোনও মহিলা লালপাড় শাড়ি, পায়ে আলতা এবং নূপুর পরে মায়ের পূজা দিতে পারবেন না। মা তাতে অসন্তুষ্ট হন বলে মনে করা হয়। মা রুষ্ট হলে ওই পরিবারে ঘনিয়ে আসে মহা বিপর্যয়, এমনটাই বিশ্বাস। তাই অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে এই কালীপুজো করা হয়। আমরা আদতে বৈদ্য ব্রাহ্মণ। পূর্বপুরুষ রামতারক গুপ্ত ছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসক। তাঁর আমল থেকেই এই পুজো শুরু। তাঁদের বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যেই এই মন্দির। এই প্রতিমাকে নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। শোনা যায় এই বংশের পাঁচ প্রজন্ম আগে পরিবারের এক মহিলা লালপাড় শাড়ি আর পায়ে নূপুর-আলতা পরে সন্ধ্যায় ওই মন্দিরে আরতি করতে যেতেন। কিন্তু একদিন তিনি আর ফিরে আসেননি। আসতে দেরি দেখে মহিলার শ্বশুর ওই মন্দিরে যান। গিয়ে দেখেন এক ভয়ংকর দৃশ্য। মায়ের মুখে রক্তমাখা সেই কাপড়ের লাল পাড়। পুত্রবধূকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকেই ওই মন্দিরে সন্ধ্যায় আরতি করতে মহিলাদের যাওয়া নিষেধ। শুধু তাই নয়, মায়ের পুজোর সময়েও কোনো মহিলা পায়ে, নুপুর, আলতা বা লালপাড় পরে যেতে পারেন না। এই বিষয়ে বর্তমান মন্দিরের পুরোহিত ঠাকুর জানান, এই বৈদ্যবাড়ির কালি মা খুব জাগ্রত। আমরা বংশপরম্পরায় পুজো করছি। এটা পঞ্চমুন্ডির আসন। তাই মুল মন্দিরের কোনও সংস্কারের হয়নি। মাটির মন্দির রয়ে গেছে।

এই পরিবারের সদস্যদের আরও দাবী, মায়ের মূর্তিতে ঠোঁটের এক কোণে রক্ত এবং লাল পাড় আঁকা থাকে। মা নির্জনতা পছন্দ করেন। তাই ওই মন্দিরে শুধু একটা ল্যাম্প আর মোমবাতি জ্বালানো হয়। কোনো মাইক্রোফোন বা লাউড স্পিকার বাজানো হয় না। বাজনা বলতে শুধু ঢাকের বাদ্যি। একাসনে পূজো, রাত বারোটায় পুজো শুরু হলে একেবারে ভোর রাতে পুজো শেষ করে সুতো কেটে ওঠেন পুরোহিত, এরপর শুরু হয় বলি। ছাগল, আখ, ছাঁচি কুমড়ো বলি হয়। অনেকেরই মানত থাকে। এরপর সন্ধ্যায় স্বপ্নে দেখা এক স্থানীয় পুকুরে মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জন করে আবার কাঠামো নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। আর মায়ের প্রতিমা কোনো ছাঁচে হয় না। বংশপরম্পরায় এই মূর্তি বানানো হয়। বংশ পরম্পরায় পুজোও করে আসছেন চট্টোপাধ্যায় পরিবার। এই বৈদ্যবাড়ীর গৃহবধু জয়া বৈদ্য জানান, বর্তমানে এই কালি বাড়িতে মহিলাদের ওঠা এবং আচার অনুষ্ঠানে কিছুটা শিথিলতা হয়েছে। বাড়ির মেয়েরাই ভোগ রান্না ও ফল কাটা মেয়েরাই করে। সব মিলিয়ে এখনও কামারপুকুরের এই বৈদ্যবাড়ির কালি পুজোকে ঘিরে নানা ঘটনার স্মৃতি চারনা করলে শিহরিত হয় এলাকার মানুষ।