মহেশ্বর চক্রবর্তী, ২০ অক্টোবর:- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় জমজমাট হুগলির বেঙ্গাই গ্রাম। শারোদৎসবের শেষে নতুন করে উৎসব শুরু হয়েছে হুগলি জেলার গোঘাটের একটি জনপদ বেঙ্গাই গ্রামে। ধন লক্ষ্মীর পুজোকে কেন্দ্র করে সেজে উঠছে গোটা বেঙ্গাই গ্রাম। চারিদিকে সবুজ গাছ গাছালি ও সোনালি ধান জমি দিয়ে ঘেরা। মনোরম গ্রাম্য পরিবেশে চলছে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা।এই গ্রামে দুর্গাপুজোয় নিয়ে মাতামাতি নেই। যত আবেগ লক্ষ্মীপুজোয়। কেননা এই গ্রামেই বড়ো লক্ষ্মী ও ছোট লক্ষ্মী নামে দুই পুজোকে ঘিরে এলাকার মানুষের উন্মাদনা তুঙ্গে। মুলত সাবেকিয়ানাকে কেন্দ্র করে এই পুজোকে ঘিরে জমজমাট পরিবেশ গড়ে উঠেছে। ধনদেবীর আরাধনাই এখানকার অন্যতম প্রধান উৎসব। আর তাতেই মেতেছে গ্রামবাসীরা। ছোট লক্ষ্মী ও বড়ো লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে নানা ঘটনা রয়েছে। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোতেই গ্রামবাসীরা নতুন জামা পড়েন। হয় প্রতিমার প্রতিযোগিতা। হুগলি জেলার গোঘাটের বেঙ্গাই গ্রামের মানুষ বছরের সেরা উৎসবে মেতে ওঠেন তারা। সকাল থেকেই ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পুজোয় সামিল হন গ্রামের মানুষ। হেমন্তের শুরুতে মাঠ জুড়ে ধান। মা লক্ষ্মীর আরাধনাতেই গ্রামের শ্রীবৃদ্ধি। প্রায় ২০৮ বছর ধরে বেঙ্গাই গ্রামে দুটি বাড়োয়ারি লক্ষ্মী পুজো হয়ে আসছে। তবে গ্রামের সকল মানুষ ছোট্ট লক্ষ্মী ও বড়ো লক্ষ্মী পুজোতে অংশ গ্রহন করলেও বেঙ্গাই গ্রামের ব্রাহ্মণ্য সম্প্রদায় দুই দলে বিভক্ত হয়ে এই পুজো শুরু করে।প্রায় ৪০ থেকে ৪২টি করে পরিবার দুই পুজোতে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। দুই জায়গায় পুজোকে ঘিরে চলে প্রতিযোগিতা।একদিকে চারদিন যাত্রা হলে অন্যদিকেও চারদিন যাত্রা পালা ও গান হবেই।
প্রতিমা নির্মানকে কেন্দ্র করেও চলে প্রতিযোগিতা। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতিতে ওই গ্রামের দুই পুজোয় ছন্দ পতন। নিরাসার সুর গ্রামে। করোনা পরিস্থিতিতে পুজোর আয়োজনে করা হয়েছে কাটছাঁট। তবে ছোট লক্ষ্মী ও বড়ো লক্ষ্মীপুজোকে ঘিরে দুই জায়গার মানুষের মধ্যে মানসিক প্রতিযোগিতা চলছে। একই তালে প্রতিমা তৈরি কাজ একদিকে যেমন জোর কদমে চলছে তেমনি পাশাপাশি পুজোর রীতি মেনে চলছে পুজোর আয়োজন। বাড়ি বাড়ি আত্নীয় স্বজনের সংখ্যা কম হলেও পুজোতলায় বেশ কয়েকজন পুজো কমিটির লোকজন রয়েছে। তাদের দাবী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজন করা হয়নি। তবে বাকী সমস্ত আচার অনুষ্ঠান মানা হবে। ভাল করে দেবীর পুজো করলে ফসল ভাল হবে। এই বিশ্বাসে প্রায় ২০৮ বছর ধরে লক্ষ্মীর পুজো হয়ে আসছে গোঘাটের বেঙ্গাই গ্রামে। দুর্গাপুজো নয়, গ্রামবাসীদের যত ভাবনা লক্ষ্মীপুজোকে নিয়ে। মা লক্ষ্মীকে নিয়ে অগাধ বিশ্বাস প্রবীণদের। এই বিষয়ে বড়ো লক্ষ্মীপুজো কমিটির এক সদস্য জানান, এই গ্রামের মানুষ খুবই দারিদ্রতার মধ্যে বাস করতো। দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদে প্রত্যকে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। অপরদিকে ছোট লক্ষ্মী পুজো কমিটির সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য জানান, ২০৮ বছর ধরে বংশ পরমপরায় এই লক্ষ্মীপুজো চলছে।দুর্গাপুজো থেকেও দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় এলাকার মানুষ বেশি অংশ গ্রহন করেন। এই পুজো প্রতিষ্ঠা করেন কেনারাম ভট্টাচার্য। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদা দেবী এই পুজোয় অংশ নিয়ে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করেছিলেন। সবমিলিয়ে গোঘাটের বেঙ্গাই গ্রামে লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে যে উন্মাদনা দেখা যায় তাতে করোনা পরিস্থিতিতে এবছর ভাটার টান।