এই মুহূর্তে জেলা

সম্রাট আকবরের হুকুমনামায় পুজো , আজও আসে ইংরেজ সরকারের অনুদান !

সুদীপ দাস, ২৬, সেপ্টেম্বর:- তৃতীয় মোঘল সম্রাট আকবরের হুকুমনামা নিয়ে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আরাধনা। ৫৬৬ বছরের ইতিহাসে আজ অবধি একবারের জন্যও সেই পুজো বন্ধ হয়নি। এবছর হুগলীর কোন্নগরে ঘোষাল বাড়ির সেই পুজো ৫৬৭ বছরে পদার্পন করতে চলেছে। মোঘল আমলে শুরু হওয়া এই পুজোয় সামাজিক উন্মাদনা দেখে খুশি হয়েছিল পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ সরকারের ইচ্ছামত কোন্নগরের ঘোষাল জমিদার বংশ তাঁদের দশভূজার আরাধনার বারোয়ারির রূপ দেয়। পুজোর স্বীকৃতি স্মরূপ তৎকালীন ইংরেজ সরকার পুজোর খরচ বাবদ ৭৫০ টাকা করে দু’দফায় মোট ১৫০০টাকা অনুদান দেওয়া শুরু করে। ইংরেজ গেছে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ঘোষাল বাড়ির পুজো আবার বাড়ির পুজো হিসাবে ফিরে গেছে। কিন্তু ইংরেজ সরকারের শুরু করা সেই অনুদান আজও আসে ট্রেজারিতে। তবে বর্তমানে সেই অনুদান গ্রহন করার লোক নেই এই পরিবারে। কারন আজ দেড় হাজার টাকার মূল্য বাজার দর অনেক কম। আর আজও আর্থিক দিক থেকে যথেষ্ট স্বচ্ছল এই পরিবার।

এই পরিবারের বর্তমান সদস্য তথা উত্তরপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক প্রবীল ঘোষাল বলেন ছোটবেলায় ঠাকুমার মুখে শুনেছি ব্রিটিশ আমলে এই দেড় হাজার টাকার মূল্য ছিলো আকাশ ছোঁয়া। তখন জাঁকজমকের সাথে পুজো, সকলে মিলে খাওয়া-দাওয়ার পরও সেই দেড় হাজার টাকা শেষ করা যেত না। উৎসব মেটার পর আমার এক কাকা ঘোড়ার গাড়ি চেপে বর্ধিত টাকা ট্রেজারিতে ফেরত দিয়ে আসতেন। এবছরও পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে ঘোষাল বাড়িতে। চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। বর্তমানে ঘোষাল বাড়ির সদস্যরা থাকেন দেশ-বিদেশে। তবে পুজোর কদিন সকলেই কোন্নগরের এই বাড়িতে আসেন। পুজোর কদিন একসাথে খাওয়া-দাওয়া, হইহুল্লোর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবই হয়। তবে গতবছর থেকে পুজোর বাড়তি উৎসবে থাবা বসিয়েছে করোনা। প্রবীরবাবু বলেন গতবছরও কোভিড বিধি মেনেই পুজো করেছি। তবে দশমীর দিন একসাথে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিলাম। এবার পুজো ছাড়া মোটামুটিভাবে সব বন্ধ। আমাদের পরিবারের একাধিক সদস্য চিকিৎসক। তাঁরাও বারণ করছেন। তাই এবার মায়ের কাছে প্রার্থনা মহামারি দূর করে সামনের বছর থেকে যেন ঘোষাল বাড়ির পুজো আবারও স্বমহিমায় ফিরে আসে।