এই মুহূর্তে জেলা

১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধীর উঠছে না হাতের ছাপ , “আধার” না পেয়ে আঁধারে পোলিও আক্রান্ত তাপস !

সুদীপ দাস, ১০ সেপ্টেম্বর:- বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাস বলতে বোধহয় একেই বোঝায়। সেই বছর তিনেক বয়সে মা হারিয়েছেন। ৫বছর বয়স থেকেই শারিরীক সমস্যা শুরু। আর মাত্র ৮বছর বয়সে বাবাও চোখ বুঝলেন। তখন সম্বল শুধুমাত্র বছর দশেকের বড় একমাত্র দাদা। ভাইয়ের কথা চিন্তা করে কিশোর বয়সেই বিয়েটা করে ফেলেন দাদা। সেই থেকে আজ অবধি ভাইয়ের সর্বক্ষনের সঙ্গী বলতে দাদা আর বৌদি। চন্দননগরের ভূপতি মজুমদার গলির বাসিন্দা পোলিও আক্রান্ত তাপস দের কাছে তাঁর দাদা-বৌদিই, “বাবা-মা”! ৫ বছর বয়সে প্রথম পায়ের সমস্যা শুরু হয়। এরপর চিকিৎসা শুরু হয়েছিলো কিন্তু শরীরে প্রান থাকলেও ধীরে ধীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসাড় হতে শুরু করে। তাপসবাবুর বয়স যখন ১৭ তখন হাত-পা, কোমড় সহ গোটা শরীরটাই বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। সেই থেকে বিছানাই তাঁর সঙ্গী। বিছানায় শুয়ে পাশ ফিরতেও অন্যের সাহায্য প্রয়োজন। কোমড় অসার! তাই বসতে গেলে কোমড়ে বেল্ট বাঁধতে হয়।

এহেন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও তাপসবাবু অন্যের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। বর্তমানে ৫০এর কোঠায় দাঁড়ানো তাপস দে প্রায় ২০বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দর নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করেছেন। প্রতিদিন বিকেলে হুইল চেয়ারে করে বেড়িয়ে দু’ঘন্টার জন্য সংগঠনের কাজ করেন। বছরভর ওই সংগঠন বৃক্ষরোপণ, রক্তদান শিবির, স্বাস্থ্যশিবিরের মত কাজ করে চলেছে। কিন্তু বর্তমানে আধার কার্ডের জন্য তাপসবাবুর নাজেহাল অবস্থা। আধার কার্ড না থাকার জন্য বিগত মাসকয়েক ধরে করোনা ভ্যাকসিনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছে। প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরে প্রথম দিকে কোন কাজই হয়নি। মাসখানেক আগে চন্দননগরের তৃণমূল নেতা মুন্না আগরওয়ালের সৌজন্যে ভোটার কার্ড দেখিয়ে ভ্যাকসিনটা পেয়েছেন তাপসবাবু। কিন্তু আধার কার্ডের যে কি মর্ম তা ভ্যাকসিন যাত্রায় বুঝতে পেরেছেন তিনি। তাই এখন আধারের জন্য দুশ্চিন্তায় দিন গুনছেন তাপসবাবু

কারন নিজে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাবার পেনশনের কিছুটা পান। যা দিয়ে নিজের ওষুধ খরচটা উঠে যায়। কিন্তু এখন ব্যাঙ্কেও যে আধার কার্ড অত্যাবশ্যক। তাই আধরের জন্য ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক, পোষ্ট অফিস প্রভৃতি জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু সর্বত্র হাতের ছাপের সমস্যা। মেশিনে হাত ছাপ না ওঠায় আধার কার্ড হচ্ছে না। তাপসবাবুর প্রশ্ন আমাদের দেশে বহু মানুষ আছেন যাদের হয়তো দুটো হাত নেই। তাহলে তাঁদের কি আধার কার্ড হবে না? একই প্রশ্ন তাপসবাবুর দাদা প্রদীপ দেরও। তিনি বলেন এতদিন ধরে ভাইকে বড় করলাম। ওর সবকিছু আমি আর ওর বৌদি করে দি। কিন্তু এখন ভাবছি ভাইয়ের আধার কার্ডটা কি কোনদিন করে দিতে পারব না!