এই মুহূর্তে জেলা

টিটু-মিঠুর মায়ের লড়াই পৌঁছল থানায় , পুলিশি হস্তক্ষেপে হাসি টিটুর মায়ের !

সুদীপ দাস, ২৭ আগস্ট:- বছর দেড়েক আগে মাস ছয়েকের টিটুর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল তাঁর পালিত মায়ের। হঠাৎ করেই একদিন বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় আদরের টিটু। তারপর থেকে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন চাঁপদানীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফেসুয়াবাগানের বাসিন্দা গুড়িয়া দাস। বহু খোঁজাখুজি করেও টিটুর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে গুড়িয়া স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন বলে দাবী। কিন্তু টিটুর খোঁজ মেলেনি। প্রায় বছর দেড়েক আগে ঘর ছাড়া টিটু কিন্তু পাশের ওয়ার্ডে চৌধুরী পরিবারে বড় হতে থাকে। চৌধুরী পরিবারের দম্পতি রাজকিশোর ও নিশার কাছে টিটুর নতুন নাম হয় মিঠু। নতুন বাবা-মায়ের আদরে দুই সন্তানের মা হয়ে ওঠে মিঠু ! কি ঘাবড়ে গেলেন তো ? ছ’মাস বয়সে হারিয়ে যাওয়া টিটুর বয়স তো দেড় বছর বাদে মাত্র ২বছর হওয়ার কথা। এই বয়সে সে মা হবে কি করে? হ্যাঁ এমনটাই হয়েছে! কারন টিটু বা মিঠু যাই বলুন না কেন ঘরের সন্তানের মত আদর পেলেও সে মানুষ নয়!

সে আদতে একটি ছাগল! হুগলীর চাঁপদানী ফেসুয়াবাগানের গুড়িয়া দাসের বাড়িতেই জন্ম সেই রোমন্থন প্রানীর। নাম রাখা হয় টিটু। মাতৃ স্নেহেই গুড়িয়া টিটুর লালন-পালন শুরু করে। কিন্তু মাঠে চড়তে গিয়ে ছ’মাস বয়সে হারিয়ে যায় সে। তারপর থানায় অভিযোগও করেছিলেন গুড়িয়া। কিন্তু কোন খোঁজ মেলেনি। সম্প্রতি গুড়িয়া জানতে পারে পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজকিশোরের বাড়িতে তাঁর টিটু মিঠু নামে বড় হচ্ছে। সে সেখানে দুটি সন্তানেরও জন্ম দিয়েছে। এরপর সেই বাড়িতে গিয়ে একাধিকবার টিটুর দাবী করেন গুড়িয়া। কিন্তু ভাত, দানা থেকে শুরু করে চা-বিস্কুট খাইয়ে বড় করা পোষ্যকে কোন ভাবেই দিতে রাজি হয়নি চৌধুরী দম্পতি। যা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয় বলে খবর। টিটুর দাবীতে অবশেষে চাঁপদানী ফাঁড়ির দ্বারস্থ হন গুড়িয়া।

ছাগল সহ দু’পক্ষকে ফাঁড়িতে ডেকে পাঠায় পুলিশ ইনচার্জ বিশ্বজিৎ পাল। চৌধুরী দম্পতি বৃহস্পতিবার রাতে তিনটি ছাগল নিয়ে চাঁপদানী ফাঁড়িতে উপস্থিত হন। উপস্থিত হন গুড়িয়াও। সকলকে নিয়ে এদিন ফাঁড়িতে রিতিমত সালিশি সভা আয়োজিত হয়। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর পুলিশি নির্দেশে দুই সন্তান সহ টিটুকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় গুড়িয়া দেবীর কাছেই। মহাআনন্দে হারানো টিটুর গোটা পরিবারকে টোটোতে চাপিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেন গুড়িয়া। আর চৌধুরী দম্পতি। তাঁদের চোখে তখন জল। অশ্রুসজল চোখে তাঁরা বলেন মানুষের মত মানুষ করেছিলাম। আমার বাড়িতেই ও একজন থেকে তিনজন হয়েছে। তাই আমরা ভাবছি এ কেমন রায়! একটি সন্তানকে অন্তত আমাদের কাছে দিয়ে যেতে পারতো !!