এই মুহূর্তে জেলা

মৃত শিশুকে বাঁচাতে ওঝার ঝাড়ফুঁক, পুলিশ গিয়ে দেহ পাঠালো ময়নাতদন্তে!

সুদীপ দাস, ১৯ জুলাই:- এতদিন সাপের কামড়ে মৃতের দেহ নদীতে ভাসানোর খবর শুনেছেন। কিন্তু সাপের কামড়ে মৃত্যুর পর প্রায় দেড় দিন মৃতদেহ বাড়িতে রেখে ওঝার ঝাড়ফুঁকের কথা অনেকেই শোনেননি। এবারে সেরকমই ঘটনার স্বাক্ষী থাকলো হুগলীর পান্ডুয়া থানার ইটাচুনা এলাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইটাচুনার পদ্মপুকুরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা রাজু সরেনের ১০ বছরের শিশুকন্যা বৃষ্টিকে গত বুধবার সাপে কামড়ায়। সেদিনই প্রথমে তাঁকে ইটাচুনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু গত শুক্রবার রাজু বন্ড সই দিয়ে চুঁচুড়া হাসপাতাল থেকে মেয়েকে ছুটি করিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। পথে জিরাটের কাছে কোন এক কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফেরে রাজু।

রাজুর কথামত শুক্রবার বাড়িতে ভালোই ছিলো মেয়ে। শনিবার দুপুরের পর মেয়ের শরীর ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে। পরে স্থানীয় এক চিকিৎসককে বাড়িতে নিয়ে এলে চিকিৎসক শিশুটিকে স্যালাইন দেয়। কিন্তু শনিবার রাতেই শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে বলে পরিবারের দাবী। রাজুর বক্তব্য রবিবার সকালে শিশুটিকে ইটাচুনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষনা করেন। এরপর মেয়ের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এসে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে শুইয়ে দেয়। উল্লেখযোগ্য তখনও স্যালাইন খোলা হয়নি। সেই অবস্থাতেই বাড়ির লোকেরা ওঝার বাড়িতে ছোটাছুটি শুরু করে।

রাজুর বক্তব্য একবার মেয়ের পা নড়েছিলো। আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস সাপের কামড়ে মৃত্যু হলে এভাবেই সে আবার প্রান ফিরে পেতে পারে। সোমবার দুপুরে খবর পেয়ে রাজুর বাড়িতে উপস্থিত হয় পান্ডুয়া থানার পুলিশ। পুলিশ শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো ২০২১ সালে বিজ্ঞান যখন মহাবিশ্বে পৃথিবীর বিকল্প খুঁজতে ব্যাস্ত তখন কিভাবে একশ্রেনীর মানুষ এভাবে কুসংস্কারকে সঙ্গী করেই বেঁচে আছেন। এবিষয়ে পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ বলেন এখনও কিছু মানুষের অন্ধবিশ্বাস রয়েছে মেয়েটিকে বন্ড সই দিয়ে হাসপাতাল থেকে না নিয়ে এলে হয়তো বেঁচে যেত। আমরা বিষয়টি জানতাম না। তবে পুলিশ জানার পরই ব্যাবস্থা নিয়েছে।