কলকাতা, ১৩ জুলাই:- রাজ্য সরকার বিভিন্ন জেলার আরও ৩৫ টি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের শর্তসাপেক্ষে জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কলকাতা সংলগ্ন হাওড়া উত্তর ২৪ পরগনার এই উদ্বাস্তু কলোনিতে শীঘ্রই সমীক্ষার কাজ শুরু হবে। উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের জমির শর্ত সাপেক্ষ মালিকানাদেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই বেশ কিছুটা এগিয়েছে। গত দেড় বছরে ২০৯ টি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে এক লক্ষ ২৫ হাজার পাট্টা বিলি করা হয়েছে বলে ভূমি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। গতবছর আরো ১১৫ টি উদ্বাস্তু কলোনিকে চিহ্নিত করে তাদের বাসিন্দাদের জমির শর্তাধীন মালিকানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩৫ টি কলোনির বাসিন্দাদের পাট্টা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। বিস্তারিতভাবে ওই কলোনিগুলোতে সমীক্ষা চালানোর পর প্রত্যেক বাসিন্দাদের জমির প্লট নির্ধারণ করে পাট্টা বিলি করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
স্বাধীনতার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু এ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দক্ষিণে বারুইপুর থেকে উত্তরে কাঁচরাপাড়া পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাড়ে গড়ে উঠেছিল উদ্বাস্তু কলোনি। উদ্বাস্তুদের নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য দিতে আলাদা উদ্বাস্তু পুনর্গঠন দফতরও তৈরি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই দফতরের কাজ ছিল, সরকারি জমিতে উদ্বাস্তুদের জমির ব্যবস্থা করে রাস্তা, জল, আলোর মতো পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু সরকার সেই সময় উদ্বাস্তুদের হাতে জমির মালিকানা দেয়নি। মূলত ঠিকা প্রজা হিসেবে তাঁরা বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী কালে কোথাও কোথাও দীর্ঘমেয়াদি লিজের ব্যবস্থাও করা হয়। নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে গড়ে ওঠা কলোনিগুলির সেই আগের চেহারা আর নেই।
কয়েক দশক পরে দরমার বেড়া, টিন-টালির ছাউনির কলোনি এখন পুরোদস্তুর শহরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি প্রজন্ম এ রাজ্যে কাটানোর পরেও বহু এলাকাতেই জমির মালিকানা পাননি উদ্বাস্তু পরিবারগুলি বা তাঁদের উত্তরসুরিরা। ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ও বেসরকারি মালিকানাধীন জমিতে এখনও প্রচুর শরণার্থী কলোনি রয়ে গিয়েছে। বহু দিন ধরেই ওই কলোনিগুলির আইনি স্বীকৃতী দিয়ে শরণার্থীদের জমির মালিকানা দেওয়ার জন্য আমরা আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে উল্টে কলোনির বাসিন্দাদের হাতে উচ্ছেদের নোটিশ ধরানো হচ্ছে।’