এই মুহূর্তে কলকাতা

১৯৬-৬৯ ভোটে বিধান পরিষদের প্রস্তাব গৃহীত বিধানসভায় , অপেক্ষা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন।

কলকাতা, ৬ জুলাই:- রাজ্যের আইন সভার উচ্চ কক্ষ বিধান পরিষদের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব রাজ্য বিধানসভায় গৃহীত হয়েছে। বিধান পরিষেদ পূনর্গঠনের জন্য ২০১১ সালে সরকার পক্ষ একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে। তাঁর রিপোর্ট বিধানসভায় জমা পড়লেও ওই প্রক্রিয়া সেসময় আর এগোয় নি। রাজ্যে তৃতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী পুনরায় বিধান পরিষদ গঠনের ব্যপারে তত্পর হন। সেই লক্ষ্যে বিধান পরিষদের পক্ষে জমা পড়া অ্যাডহক কমিটির রিপোর্ট বিধানসভার সদ্যদের মধ্যে বিলি করার পাশাপাশি আজ বিধান পরিষদ গঠনের ওপর সভায় একটি প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবের স্বপক্ষে বলতে গিয়ে প্রস্তাবক পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সংবিধানেই রাজ্যকে বিধান পরিষদ গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হযেছে।রাজ্য সরকার বর্তমানে একে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনিয়তা অনুধাবন করছে।

রাজনীতির বাইরে যেসব বিশিষ্টরা নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাননা অথবা ভোটে দাঁড়াতে চাননা এর ফলে তাঁরা সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। পার্থ বাবু বলেন, ‘কেন করা হচ্ছে তার জবাব সংবিধানেই দেওয়া আছে। রাজ্যে আর্থিক অবস্থা নিয়ে কেউ কেউ চিন্তিত কিন্তু কোন শিক্ষকে মাইনে বন্ধ হয়েছে? কেউ এম এল এ ভোটে হেরে রাজ্য সভায় সদস্য হচ্ছেন এ উদাহরণ তো ভুরি ভুরি আছে। কিন্তু রাজ্যে থেকে বাংলার কথা চিন্তা করব না এটা হতে পারে না। এর প্রয়োজনীয়তা আছে। বিশিষ্টরা বলছেন আছে।’দেশের অন্য বহু রাজ্যেও যে বিধান পরিষদের অস্তিত্ব আছে পার্থ বাবু সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেন। উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর কারণে ১৯৬৯ সালে তত্কালীন বাম সরকার আইন করে বিধান পরিষেদ ভেঙে দেয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এর আগে বিরোধীরা অহেতুক ব্যয় বাহুল্য, স্বজন পোষমের অভিযোগ তুলে বিধান পরিষদ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় পরিষদীয় মন্ত্রী তাদের তীব্র সমালোচনা করেন।

প্রবীণ বিধায়ক মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ ভৌমিক প্রমুখ প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। অন্যদিকে প্রস্তাবের বিরোধিতা করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারি বলেন, বিধান পরিষদ গঠন ঋণ জর্জর রাজ্যের ওপর আর্থিক ভাবে চাপ বাড়াবে। তাঁর আশঙ্কা শাসক দল নিজেদের লোকেদের জায়গা করে দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। শুভেন্দু বলেন, ‘লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হয়ত পর অনুমোদন দেবে রাষ্ট্রপতি। কাজেই এখানে সংখ্যার জোরে পাশ করানোর কোন অর্থ নেই। বিধান পরিষদ আর্থিক ভাবে চাপ বাড়াবে। আমাদের দলের অবস্থান আমরা বিধান পরিষদের বিরুদ্ধে। আমাদের আশঙ্কা নিজেদের লোকেদের জায়গা করে দিতে এই উদ্যোগ। বিজেপি নীতিগতভাবে বিধান পরিষদের বিরুদ্ধে বলে তিনি জানান।

সংযুক্ত মোর্চার প্রতিনিধি নওসাদ সিদ্দিকিও একই সুরে বিধান পরিষদ পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্তের বিরোধীাতা করেন। প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিজেপির মনোজ টিগ্গা, অম্বিকা রায়, তাপসী মন্ডল প্রমুখও ভাষণ দেন। আলোচনার শেষে ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি সভায় গৃহীত হয়। প্রস্তাবের স্বপক্ষে ১৯৬ টি ও বিপক্ষে ৬৯ টি ভোট পরে। এর পর নিয়ম অনুযায়ী এই প্রস্তাব সংস্দের উভয় কক্ষের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তারপর রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দিলে তবেই বিধান পরিষদ ফিরিয়ে আনতে পারবে রাজ্য। কিন্তু বিজেপি এই সিদ্ধান্তের জোর গলায় বিরোধিতা করায় এই প্রস্তাবের রূপায়ণ আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে।