কলকাতা , ২৮ মে:- ঘূর্ণিঝড় যশের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী যোগ দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী তা বয়কট করেন ৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করলেন রাজ্য়পাল জগদীপ ধানখড়। কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ,প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং,বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা সকলেই মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের আচরণের সমালোচনা করেছেন। শুক্রবার পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আকাশপথে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখার পর বেলা ২টোর কিছু পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলাইকুন্ডায় পৌঁছন। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি তাঁর হাতে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তুলে দেন। সামান্য কিছু সময় কথা বলেই সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপরে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর, প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রমুখ।যেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল মমতার।মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তাঁর অনুপস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠক পূর্ব নির্ধারিত ছিল। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি যে, আপনি এতদূর থেকে দেখা করতে এসেছেন, তাই আমি দেখা করতে এলাম। আমার অন্য মিটিং ঠিক রয়েছে। আমাকে যেতে হবে।
ওড়িশা বা বাংলার ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকা পরিদর্শনের জন্য বৃহস্পতিবার দুই রাজ্যে সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।ওড়িশায় যেমন তিনি মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েককে নিয়ে রিভিউ মিটিং করেছেন, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে বলা হচ্ছে, এ ধরনের বিপর্যয়ের পর বিরোধী দলনেতাদেরও বৈঠকে ডাকা প্রধানমন্ত্রী প্রথায় পরিণত করেছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। অতীতে কেরল, কাশ্মীরেও এমনটাই হয়েছে। ওমর আবদুল্লাহ বিরোধী নেতা হিসাবেই কাশ্মীরের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন যা করেছেন, তা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বেনজির ঘটনা। কেন্দ্রের এও বক্তব্য, এর আগে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী বা রাজ্যপালের ডাকা বৈঠক নিয়ে এমন সংকীর্ণ আচরণ করেননি। এই রাজনীতির আসলে ক্ষতি হবে রাজ্যের মানুষেরই। বাংলায় ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট পেশ করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ চেয়েছেন। আবার পড়শি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক বলেছেন, যে হেতু কেন্দ্রের উপরে কোভিডের এত বোঝা, তাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনও অর্থ সাহায্য চাননি। ঘূর্ণিঝড় যশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা পর্যালোচনা বৈঠকে অংশ না নেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করলেন রাজ্য়পাল জগদীপ ধনকড় ৷ সরকারের সংঘাতপূর্ণ আচরণ রাজ্য তথা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর বলে টুইট করেছেন তিনি ৷মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধানের পরিপন্থী বলে সমালোচিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর আচরণের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, মমতা দিদির আজকের আচরণ দুর্ভাগ্যজনক। ঘূর্ণিঝড় যশ সাধারন মানুষের জীবন-জীবিকার আঘাত হেনেছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন সবথেকে বেশি প্রয়োজন। দুঃখের বিষয় বিচারকে মানুষের কল্যাণের উপরে স্থান দিয়েছেন। তার এ দিনের আচরণ থেকে এটা পরিষ্কার। ব্যক্তিগতভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তাঁর এদিনের আচরণের সমালোচনা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর দুজনের সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত এবং ব্যক্তিগত বিরোধ যে সেক্ষেত্রে সামনে আনা উচিত নয় সে কথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন রাজনাথ। সংগত কারণেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে কড়া আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সভাপতির জগত প্রকাশ নাড্ডা টুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর আচরণের নিন্দা করেন। তিনি লেখেন যখন প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তখন এই বিপর্যয়ের সময় মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল তাঁর ঠুনকো আত্মমর্যাদাকে দূরে রেখে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করা। কিন্তু এদিন প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে মমতা দিদির অনুপস্থিতি সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং সহযোগিতা মূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে খুন করল।