কলকাতা, ১২ মার্চ:- কয়লা ও চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে হবে। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ নেতারা সিবিআইএর তলব পাওয়ায় ঘোর অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসক দল। যদিও মুখে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ন্ত্রের তত্বকেই তুলে ধরছেন। বহুদিন ধরেই কয়লা কেলেঙ্কারি কাণ্ডে সিবিআই-এর তদন্তকারীদের নজর তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকার স্বামী ও শ্বশুরের দিকে। এবার নোটিশ দিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালো কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। আগামী ১৫ মার্চ কলকাতার সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে মেনকা গম্ভীরের স্বামী অঙ্কুশ অরোরা এবং শ্বশুর পঙ্কজ অরোরাকে। বৃহস্পতিবার তাঁদের কাছে এই বিষয়ে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। লন্ডনে তাঁর নামে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
সেই অ্যাকাউন্টে কয়লা পাচার কাণ্ডের টাকা জমা করা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ। সিবিআই তদন্তকারীদের মেনকা গম্ভীর জানিয়েছিলেন লন্ডনের ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তাঁকে তাঁর স্বামী ও শ্বশুর কিছু নথি এনে স্বাক্ষর করতে বলেছিলেন, তিনি কিছু না দেখেই স্বাক্ষর করে দিয়েছিলেন। সেই অ্যাকাউন্টের বিষয়েই এবার অঙ্কুশ অরোরা এবং পঙ্কজ অরোরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই কাণ্ডে এরমধ্যেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপোর বাড়িতে গিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই কাণ্ডের তদন্তে দ্রুততা এনেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। বিরোধীরা একদিকে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দর্নীতির অভিযোগ তুলছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা অভিোগ করছেন, নির্বাচনের আগে চাপ সৃষ্টি করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করছে মোদী সরকার। এদিনই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের কার্যাল্যে হাজিরা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন তৃণমূলের বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী। আবার এদিনই সারদা কাণ্ডের জেরে মদন মিত্রকে ও আইকোর কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তলব করেছে সিবিআই। অন্যদিকে সারদা কাণ্ডে এবার কামারহাটির তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রকে তলব করেছে সিবিআই। আগামী সপ্তাহেই সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হিসেবে দীর্ঘ সময়ে কারাগারে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। পরবর্তী কালে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের রাজনীতিতে ফিরেছেন তিনি আবং আগের থেকেও বেশি মাওপে দাপট দেখিয়ে রাজনীতির লড়াই লড়ছেন তিনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কামারহাটি আসনে তৃণমূলের টিকিটে তিনিই প্রার্থী হয়েছেন। ইতিমধ্যেই প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন সেখানে।
এই পরিস্থিতিতেই সারদা কাণ্ডে ফের মদন মিত্রকে তলব করল সিবিআই। আগামী ১৮ তারিখ সিজিও কমপ্লেক্সে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। যদিও এবিষয়ে মদন মিত্র জানিয়েছেন, এখনও কোনও নোটিস তাঁর কাছে পৌঁছয়নি। এদিনই আবার সারদাকাণ্ডে ইডির দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী। এদিন বেলা ১১টা নাগাদ সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি’র দফতরে হাজির দেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছিলেন সমীর চক্রবর্তী। যদিও সমীর চক্রবর্তীর দাবি, সারদার কাছ থেকে তিনি কোনওদিনই কোনও আর্থিক সাহায্য পাননি।উল্টে ২০১৩ সালে সারদার বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের জন্য ১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও সিবিআই আইকোর মামলায় ডেকে পাঠিয়েছে বলে তথ্য সামনে এসেছে। যদিও পার্থবাবুও জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে কোনও নোটিস পাননি। তিনি সৎ লোক। তাই নোটিস পেলে অবশ্যই সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া দেবেন।