এই মুহূর্তে কলকাতা

প্রতিদিন নেতাদের গিরগিটিপনায় বিস্মিত হয়না দিদির কর্মীরা !!

সুদীপ দাস , ৭ মার্চ:- শুরুটা হয়েছিলো বছর কয়েক আগে একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ম্যান বলে পরিচিত মুকুল রায়কে দিয়ে। নোট বাতিলের আগেও চুঁচুড়ায় জেলাশাসক দপ্তরে এসে সাংবাদিকদের সামনে বিশ্বে নোট বাতিলের অপকারিতার গল্প শুনিয়েছিলেন। কারন সেসময় নোট পাল্টানোর লাইনে দাঁড়িয়ে ভারতেও বহু মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছিলো। কিন্তু বছর খানেকের মধ্যে সেই মুকুলের গলাতেই যে নোট বাতিলের উপকারিতার সুর ভাসবে তা মোটেও ভাবেনি মা-মাটি-মানুষের কর্মীরা। মুকুলের সাথে সাথে কাঁচরাপাড়ার রাজনীতিতেও আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে যেই পরিবর্তনের আঁচে বিদ্ধস্ত তৃণমূল। দিদির অভিষেক আদরে বিরক্ত হয়ে অনেকেই তৃণমূলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। মুকুলপন্থীরা একে একে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এতদিন পর্যন্ত রাজ্য বিজেপিতে তৃণমূল ফেরত মানেই ছিলো মুকুলপন্থী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই জায়গার অনেকটাই দখল করেছেন সম্প্রতি গেরুয়াধারী শুভেন্দু অধিকারী। ভোটমুখো বাংলায় শুভেন্দুপন্থীদের ভিড় রাজ্য বিজেপিতে। শনিবার বিজেপির প্রথম দফার প্রার্থী তালিকাতে যার ছাপ স্পষ্ট।

এখন প্রতিদিনই কেউ না কেউ তৃণমূল ছেরে বিজেপিতে যোগদান করছেন। তবে তাঁরা সকলেই নেতা। কর্মীরা তাহলে কি ভাবছেন? তৃণমূল সুপ্রিমো সবসময়ই বলেন নেতা নয় কর্মীরাই দলের আসল সম্পদ। সেই নিরিখে মুকুল-শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদানের জেরে কিছু সংখ্যক কর্মী রংবদল করলেও দীনেশ ত্রিবেদী কিংবা বৈশালী ডালমিয়াদের সাথে ক’জন কর্মী গেরুয়া বসন ধারন করেছে সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন! তাই ২১-এর লড়াই এখনও জমজমাট। এবং সেটা অবশ্যই নেতাদের বিচারে। কারন তৃণমূল থেকে নিংরে নিয়ে বিজেপির নেতাদের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে দুই দলেই এখন নেতাদের সংখ্যা উনিশ-বিশ। প্রতিদিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূল কর্মীরা বলছেন স্বার্থে ঘা লাগলেই দল বদল! সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূল কর্মীদের মতপ্রকাশ দেখে বিশ্লেষকরা মনে করছেন তৃণমূল ছেরে নেতাদের বিজেপিতে যোগদানে এখন আর সেভাবে বিস্মিত হচ্ছে না কর্মীরা। কর্মীদের বিচারে কারা এগিয়ে তাঁর উপরে কিন্তু অনেকটাই ভোটের ফলাফল নির্ভর করছে। সর্বোপরি যাদের উপরে ভোটের ফলাফল নির্ভর করছে সেই সাধারন মানুষ কাদের দিকে?

বিগত লোকসভা ভোটের নিরিখের সাথে এবারের বিধানসভা ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি কিন্তু অনেকটাই আলাদা। কারন লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলকে কাটমানি কান্ডে বিদ্ধস্ত করেছিলো বিজেপি। তারউপর পুলওয়ামাকান্ডের পর বামেদের ভোট যে রামেতে পরেছিলো অঙ্কের হিসাবে তা সুস্পষ্ট হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ২১-এ ধদলের হাল পুরোপুরি মমতার হাতে। অনেকের ডানা ছাঁটা হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বদলেছে। রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে পেট্রোপন্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। করোনার দোহাই দিয়ে লোকাল ট্রেনে ১০টাকার টকিট ৩০টাকা হবে বলে ঘোষনাও হয়েছে। তাই প্রতিদিন তৃণমূল ছেরে যতই বিজেপিতে যোগদানের সংখ্যা বাড়ুক না কেন; মূল্যবৃদ্ধির বাজারে দুর্বিসহ অবস্থায় থাকা সাধারন মানুষের মনের অঙ্কও যে লোকসভার পর থেকে পাল্টানোটাই স্বাভাবিক সেটাও মনে রাখতে হবে!!