সুদীপ দাস , ২২ জানুয়ারি:- সালটা ছিলো ১৯৪১। কোলকাতায় নিজের বাড়িতেই বন্দি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ব্রিটিশ সরকারের কড়া নজর ছিলো সুভাষের উপর। সর্বদা বাড়ির চারপাশে পাহাড়া। নজর গোয়েন্দাদেরও। কিন্তু তিনি যে সুভাষচন্দ্র। মেজদার পুত্র অতিপ্রিয় শিশির কুমার বসুকে ডেকে নিয়ে এলেন বাড়িতে। এরপর সকলের চোখে ধুলো দিয়ে মৌলবী এল.আই.সি এজেন্ট জিয়াউদ্দিন খান সেজে ভাইপো শিশিরের সাথে নিজের গাড়ি নিয়ে গভীর রাতে বেড়িয়ে পরলেন বাড়ি থেকে। ছক কষলেন রাস্তায় পুলিশ ধরলে ঔষধ কিংবা হাসপাতালের কথা বলে বেড়িয়ে যাবেন। গন্তব্য ধানবাদ। শিশিরের দাদা ডাঃ অশোক কুমার বসুর বাড়ি। শিশিরই ছদ্মবেশী মৌলবী সাহেবকে গাড়ি চালিয়ে ধানবাদ নিয়ে গেলেন। সারাদিন সুভাষ ডাঃ অশোক বসুর বাড়িতে থেকেই রাতে গোমো প্লাটফর্মে পৌঁছে যান মৌলবীর ছদ্মবেশেই। সেখান থেকে কালকা মেলে করে তৎকালীন ভারতের অংশ পাকিস্তানের পেশোয়ারে পৌঁছন সুভাষ। রাশিয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে সেখান থেকে ট্রাকে করে বার্মা পৌঁছন। সেটাই শেষ! রহস্যময় সুভাষের জীবনীতে তারপর আর ভারতবর্ষে ফেরার কথা কারোর জানা নেই।
চন্দননগরের বাসিন্দা পেশায় প্রাক্তন রেল কর্মী হরিশংকর রায় রচিত নেতাজির রহস্য সন্ধানে শীর্ষক বইয়ের চুয়াল্লিশ থেকে ছিচল্লিশ পাতায় কোলকাতার বাড়ি থেকে ছদ্মবেশে বার্মা পালানোর সেই অধ্যায় বর্নিত রয়েছে। নেতাজীর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ভারতীয় রেল ইতিমধ্যেই হাওড়া-দিল্লী কালকা মেলকে নেতাজী এক্সপ্রেস করার কথা ঘোষনা করেছে। রেলের কাছে এই দাবী দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছিলেন হরিশংকরবাবু। বিগত তিন বছরে দু’দুবার এই মর্মে রেলমন্ত্রকে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেই চিঠিতে তিনি নিজের বইয়ের কথা উল্লেখ করে, কেন কালকা মেলকেই নেতাজীর নামে করা হবে তাঁর তাৎপর্যও ব্যাখ্যা করেন। অবশেষে গত সপ্তাহে পূর্ব রেলওয়ের হেডঅফিস থেকে হরিশংকরবাবুর কাছে ফোন আসে। সেই ফোনেই চন্দননগরের এই নেতাজীপ্রেমীর বইটি রেলমন্ত্রকে তথ্য হিসাবে পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয়। এককথায় অনুমতি দেন হরিশংকরবাবু। এরপরই কালকা মেলকে রেলমন্ত্রক “নেতাজী এক্সপ্রেস” করেছে জানতে পেরে বেজায় খুশি তিনি।
অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্যা জেলায় জন্মগ্রহন করা হরিশংকরবাবু ছাত্র জীবন থেকেই নেতাজীপ্রেমি। ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে রায় পরিবার চলে আসেন কোলকাতায়। কোলকাতাতেই পড়াশুনা কলাবিভাগে স্নাতক হরিশংকরের। পরে হুগলীর চন্দননগরের উত্তর পুরশ্রীতে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। সারাজীবন নেতাজীকে নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ২০০৭ সাল থেকে “নেতাজির রহস্য সন্ধানে” শীর্ষক বই লেখা শুরু করেন তিনি। ২০১৬ সালে সেই বই লেখা শেষ হয়। চেয়েছিলেন কালকা মেলের নাম হোক “নেতাজি সুভাষ মেল”। আর রেলমন্ত্রক করেছে “নেতাজি এক্সপ্রেস”। তবে তাতে কোন দুঃখ নেই তাঁর। কারন কালকার সাথে নেতাজীর নাম জোরাটাই উদ্দেশ্য ছিলো হরিশঙ্করের। বর্তমানে ৮০-র কোঠায় দাঁড়িয়ে স্বপ্নপূরণ হলো হরিশঙ্করের। থুরি শুধু হরিশঙ্করের কেন? নেতাজীর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে স্বপ্নপূরণ হলো প্রতিটি বাঙালীর! প্রত্যেক ভারতবাসীর!