হাওড়া, ৩০ ডিসেম্বর:- শালিমারে শ্যুটআউটের ঘটনার তদন্তে নেমে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সাফল্য পেল পুলিশ। তিনজনকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ব্যবসা সংক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই এই খুন। দীর্ঘদিন ধরেই শালিমার এলাকায় জমির প্রোমোটিং নিয়ে অশান্তি চলছিল দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। সেই অশান্তির বলি হন ধর্মেন্দ্র সিং। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় দেবেন্দ্র মিশ্র, চন্দন চৌধরি এবং বিকাশ সিং ওরফে ভিকি নামের তিন অভিযুক্তকে। বুধবার দুপুরে এক সাংবাদিক বৈঠকে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল সানা আখতার বলেন, “খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। চন্দন এবং ভিকিকে বর্ধমানের পালশিট থেকে গ্রেফতার করা হয়। দেবেন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয় বি গার্ডেন থানা এলাকা থেকে।” পুলিশ জানিয়েছে, ধর্মেন্দ্র এবং তাঁর সঙ্গী সমর মাঝিকে গুলি করে চন্দন। মোট ৫ রাউন্ড গুলি চালায় সে। এরপর তারা বাইকে করে দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকেই হাওড়ার আন্দুলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ধর্মেন্দ্রকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ডিসি জানিয়েছেন, গুলিতে জখম ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে চন্দন তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। এরপর পুলিশ খোঁজ শুরু করে। গোপন সূত্রে পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্ত দু’জন বর্ধমান পালাচ্ছে।
সেই অনুযায়ী বর্ধমান পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। বর্ধমান পুলিশ তাদের ফলো করে। এরপর বর্ধমানের পালশিট থেকে গ্রেফতার হয় চন্দন এবং ভিকি। পাশাপাশি বি গার্ডেন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় দেবেন্দ্র মিশ্রকে। যে গাড়ি করে অভিযুক্তরা পালাচ্ছিল সেই গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ধৃতেরা গাড়ি করে বিহারে পালাচ্ছিল বলেও পুলিশ প্রাথমিক জেরায় জানতে পেরেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ব্যবসা সংক্রান্ত কারণেই শ্যুটআউটের ঘটনা বলে মনে করা হলেও তাদের খুনের উদ্দেশ্য কি তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এই ঘটনায় আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার ধৃত ৩ জনকে হাওড়া জেলা আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে শালিমারের অফিস থেকে বাইকে করে বাড়ি ফেরার সময় ধর্মেন্দ্র সিং নামে এক তৃণমূল নেতা এবং তাঁর সঙ্গী সমর মাঝি ওরফে বাঁটুলের ওপর গুলি চালায় কয়েকজন দুষ্কৃতি। আন্দুল রোডের দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ওঠার মুখে বাইকে দুষ্কৃতিরা এসে ৫ রাউন্ড গুলি চালায় দুজনের ওপর। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে যান দুজন।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের দুজনকে আন্দুলের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ধর্মেন্দ্রেকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। বাঁটুলের সেখানেই চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনায় তদন্তে নেমে সাফল্য পেল পুলিশ। প্রাথমিকভাবে অনুমান রিয়েল এস্টেটের সিন্ডিকেট দখলের দুই দলের লড়াইয়ের ফলেই এই পরিণতি। শালিমার এলাকার একটি ৫২ বিঘা জমিতে তৈরি হতে চলা আবাসনের কাজের বরাত পাওয়া নিয়ে ভিকি গোষ্ঠীর সাথে বিবাদে জড়িয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। শুরুতে দুই পক্ষই সমানভাবে বরাত পাবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে সিন্ডিকেটের সেই লড়াইয়ে নিজের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বরাতের পুরোটাই নিজের পক্ষে আনার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র সিং। যার ফলস্বরূপ আগের সিদ্ধান্তমতো কাজের বরাতের ছিটেফোঁটাও জুটছিলো ভিকি গোষ্ঠীর কপালে। একটু একটু করে কাজের বরাতের প্রায় পুরোটাই পাচ্ছিল ধর্মেন্দ্র। সেই কারণেই পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার এই পরিকল্পনা নেয় ধর্মেন্দ্রের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী।