এই মুহূর্তে খেলাধুলা

রয়ের গোলে এটিকে মোহনবাগানে জয় কৃষ্ণ

প্রসেনজিৎ মাহাতো , ৩ ডিসেম্বর:- মণ্ডবী নদীর তীরে ফের কৃষ্ণা লীলা। তাতেই চলতি আইএসএলে জয়ের হ্যাটট্রিক সবুজ-মেরুন বাহিনীর। কৃষ্ণার শেষ মুহূর্তের গোলে ওডিশা এফ সি-কে ১-০ হারালো এটিকেমোহনবাগান।কলকাতা ডার্বি জেতা এটিকে মোহনবাগানকে এ দিন প্রথমার্ধে সাদামাটা ফুটবল খেলে। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ ধারালো হয়ে ওঠে। ম্যাচের শেষ মিনিটে সন্দেশ ঝিঙ্গনের সহায়তায় হেডে দুর্দান্ত গোল করে দলকে জেতান কৃষ্ণা। তিন ম্যাচে নয় পয়েন্ট নিয়ে ফের শীর্ষে উঠে গেল এটিকে মোহনবাগান। ওডিশা তিন ম্যাচে এক পয়েন্ট নিয়ে নেমে গেল দশ নম্বরে। ২৪ মিনিটে ভাল সুযোগ পেয়ে যান রয় কৃষ্ণা। একটি লং বল ধরে গোলের দিকে দৌড়েছিলেন তিনি, শটও নেন, কিন্তু বল গোলে রাখতে পারেননি।এটিকে মোহনবাগান দলে এ দিন একটিই মাত্র পরিবর্তন হয়। ডেভিড উইলিয়ামসের জায়গায় মনবীর সিং আসেন প্রথম একাদশে। আইএসএলে ৫০তম ম্যাচ খেলেন। আগের ম্যাচে একক প্রচেষ্টায় অসাধারণ একটি গোল করেছিলেন মনবীর। ডেভিড উইলিয়ামসকে এ দিন রিজার্ভ বেঞ্চেো দেখা যায়নি। সম্ভবত চোট আছে তাঁর। এডু গার্সিয়ার চোটের কথা তো বুধবারই স্বীকার করে নেন কোচ। ওডিশা এফসি-র আক্রমণ বিভাগে এ দিন শুরু থেকেই দুই ব্রাজিলিয়ানকে রাখেন কোচ স্টুয়ার্ট ব্যাক্সটার। মার্সেলিনহোর সঙ্গে দিয়েগো মরিসিও। আগের ম্যাচগুলোতে মরিসিও শুরু থেকে মাঠে নামেননি। তবে গত ম্যাচে শেষ ২০ মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল করে ০-২-এ পিছিয়ে থাকা দলকে হারের হাত থেকে বাঁচান তিনি। হয়তো তারই পুরষ্কার পান এই ম্যাচে। প্রথম ১৫ মিনিটে কোনও দলকেই বেশি আগ্রাসী ফুটবল খেলতে দেখা যায়নি।

পরস্পরকে মেপে ও বুঝে নেয়। দুই দলই নিজেদের ডিফেন্সকে আঁটোসাটো রেখে খেলে। তবে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল সবুজ-মেরুন শিবির। ওডিশা এফসি অবশ্য মাঝে মাঝে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে। ১১ মিনিটের মাথায় এ রকমই এক আক্রমণে উঠতে গিয়ে তিরির সঙ্গে বিপজ্জনক সঙ্ঘর্ষে চোট পান মার্সেলিনহো। যার জন্য তিরিকে হলুদ কার্ড দেখেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে উইং প্লে বাড়ানোর চেষ্টাই শুরু করে এটিকে মোহনবাগান। ডান দিকের উইং দিয়ে আগের চেয়ে বেশি উঠতে দেখা যায় প্রবীর দাসকে। ৫০ মিনিটের মাথায় বল নিয়ে বক্সে ঢুকতে গিয়ে মারাত্মক ভাবে বাধা পান তিনি। বক্সের মধ্যে পিছন থেকে তাঁকে ট্যাকল করেন হেন্ড্রি অ্যান্টনি। রেফারি অজিত কুমার মিতেই পেনাল্টি দিলে হয়তো ভুল সিদ্ধান্ত হত না। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত না নিয়ে তিনি ফ্রি কিক দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। ৫৬ মিনিটের মাথায় প্রায় সেমসাইড গোল করেই দিয়েছিলেন ওডিশার দক্ষিণ আফ্রিকান মিডফিল্ডার কোল আলেকজান্দার। কিন্তু তার আগে গোলের সামনে মনবীরের হাতে বল লেগে যায় বলে সেই গোল বাতিল করে দেন রেফারি। ডান দিকের উইং দিয়ে প্রবীর ঘনঘন উঠতে শুরু করলেও বাঁ দিকের উইং দিয়ে সে ভাবে উঠছিলেন না এটিকে মোহনবাগানের কেউ। এই দায়িত্বটা শুভাশিস বা কার্ল ম্যাকহিউ নিলে হয়তো কার্যকরী হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা ধারাবাহিক ভাবে সেই দায়িত্ব নিতে পারেননি।

মাইকেল সুসাইরাজের অভাব এ দিন ভাল মতোই টের পাচ্ছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা। মাঝমাঠে জয়েশ রানে ও আক্রমণে মনবীরকে এদিন কিছুটা হলেও বিবর্ণ লাগছিল। তাই ৬৭ মিনিটে দু’জনকেই তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্র্যাডেন ইনম্যান ও গোয়ানিজ মিডফিল্ডার গ্ল্যান মার্টিন্সকে নামান হাবাস। বিপক্ষের গোল এরিয়ায় চাপ বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত হাবাসের। অন্যদিকে, হাবাস দলে পরিবর্তন করার পরপরই দুই ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড মার্সেলিনহো ও মরিসিওকে তুলে যথাক্রমে স্যামুয়েল লালমুয়ানপুইয়া ও মানুয়েল ওনুকে নামান ব্যাক্সটার। কৌশলের লড়াইয়ে এ দিন একে অপরকে সমানে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন দুই কোচ। আট বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার লিগে দু’বার দেখা হয়েছিল দুই কোচের দলের। প্রথমবার হেরে গিয়েছিল হাবাসের দল। পরের বার ড্র হয়। এ বার ব্যাক্সটারের দলকে হারানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন হাবাস। এ বার আট বছর আগের সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়ে নিলেন হাবাস। শেষ ১৫ মিনিটে ম্যাচ জমে ওঠে দুই দলেরই গোল পাওয়ার চেষ্টা বাড়তে থাকায়। এই প্রথম আইএসএলের ম্যাচে নামলেন সাহিল। দেশের সেরা লিগে অভিযান শুরু হল বাংলার আর এক ফুটবলারের।

এটিকে মোহনবাগান দল: অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোল), প্রীতম কোটাল, তিরি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, প্রবীর দাস শুভাশিস বসু, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ (শেখ সাহিল), কার্ল ম্যাকহিউ, জয়েশ রানে (ব্র্যাড ইনম্যান), মনবীর সিং (গ্ল্যান মার্টিন্স), রয় কৃষ্ণা।