এই মুহূর্তে জেলা

প্রায় ৫৫০ বছরের প্রাচীন সিঙ্গুরের ডাকাত কালি মন্দিরকে ঘিরে আছে নানা ইতিহাস।


হুগলি , ১০ নভেম্বর:- প্রায় ৫৫০ বছর আগে সিঙ্গুরের ডাকাত কালি মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস। বৈদ্যবাটী-তারকেশ্বর রোডের পাশে পুরুসোত্তমপুর এলাকায় এই ডাকাতকালী মন্দির। কথিত আছে অসুস্থ ঠাকুর রামকৃষ্ণকে দেখতে মা সারদা কামারপুকুর থেকে দক্ষিনেশ্বর যাবার পথে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত মায়ের পথ আটকে দাঁড়ায় ডাকাতির উদ্যেশ্যে। সেই সময় রক্তচক্ষু মা কালির মুখ দেখতে পায় ডাকাতরা। ভুল বুঝতে পেরে মা সারদার কাছে ক্ষমা চায়। সন্ধ্যা নামায় সেই রাতে ডাকাত দের আস্তানায় মা সারদাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ডাকাতরা। মা সারদাকে রাতে খেতে দেওয়া হয় চাল-কড়াই ভাজা। পরের দিন সকালে ডাকাতরা মা সারদাকে দক্ষিণেশ্বরে দিয়ে এসে ডাকাতি ছেড়ে দেয়। সেই থেকে কালিপুজোর দিনে মায়ের প্রথম নৈবিদ্য প্রসাদ হিসাবে চাল-কড়াই ভাজা দেওয়া হয়।

এ ছাড়াও লুচি ভোগ, ফল দেওয়া হয় পুজোর প্রসাদ হিসাবে। মন্দিরের সেবাইত রবীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন, কালি পুজোর দিন চার প্রহরে চারবার পুজো ও ছাগ বলি হয়। ইতিহাস বলে, আগে এই এলাকায় পাশে সরস্বতী নদীর পাশে জনমানব শূন্য জঙ্গলে ডাকাতরা মাটির কুঁড়ে ঘর বানিয়ে ঘট পুজো করে ডাকাতি করতে যেত। আগে নরবলি হত। পরে বর্ধমানের রাজার দান করা জমিতে সিঙ্গুর থানার চালকেবাটি গ্রামের মোড়লরা এই মন্দির তৈরি করে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। কালি পুজোর দিন মোড়ল দের পূজোর পর অন্য ভক্তদের পুজো নেওয়া হয়। পুরসোত্তমপুর গ্রামে এই ডাকাত কালির মন্দির থাকার কারণে মল্লিকপুর, জামিনবেড়িয়া ও পুরসোত্তমপুর এই তিন গ্রামে কোনো বাড়িতে বা বাড়োয়ারীতে হয় না কোন কালিপুজো। এমন কি কোন বাড়িতে দেওয়ালে টাঙানো থাকেনা ক্যালেন্ডারে আঁকা কালী মূর্তি।

মা এতটাই জাগ্রত যে এই প্রতিমার পুজো ছাড়া অন্য কালী প্রতিমার পুজো করতে সাহস পায় না এলাকার মানুষজন। বছরে একবার কালীপুজোর দিন ‘শুদ্রদের’ আনা গঙ্গা জলে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে ঘটের জল পাল্টানো হয়। সেই সময় কোনও মহিলা মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনা। তবে এইবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে কালীপুজোর দিন রাতে মন্দির সংলগ্নে আতসবাজির প্রতিযোগীতা বন্ধ রাখা হয়েছে। মন্দিরের বাইরে ব্যারিকেড করা হবে। মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যাবস্হা রাখা হবে। মন্দিরের ভিতরে কোনো ভক্তদের উঠতে দেওয়া হবে না। কালিপুজোর পরদিন মন্দির থেকে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো বন্ধ রাখা হয়েছে।