কলকাতা , ৫ অক্টোবর:- রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই আবার সামনে এল গোর্খাল্যান্ড ইস্যু। আগামী বুধবার ওই বিষয়ে আলোচনা করতে দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।সেখানে ডাকা হয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিতর্কিত নেতা বিমল গুরুং কেও। ভোটে ফয়দা তুলতেই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকার ওই বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডির নেতৃত্বে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে এক বৈঠক ডাকা হয়েছে। আর তাতে উপস্থিত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সরাসরি ডেকে পাঠিয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব, দার্জিলিংয়ের জেলা শাসক, গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) প্রধান সচিব এবং অবিভক্ত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি ‘ফেরার’ বিমল গুরুংকে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার এই বৈঠকে অংশ নেবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে দিল্লির নর্থ ব্লকে যে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে তাতে ডাকা হয়নি কালিম্পঙয়ের জেলাশাসককে। যদিও কালিম্পঙও জিটিএ এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
রাজ্য সরকারকে আড়ালে রেখে বাংলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চলছে বলে অভিযোগ করেছে নবান্ন। সূত্রের খবর, পুরো বিষয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সেন্টার-স্টেট (সিএস) ডিভিশনের তরফে ডাকা এই বৈঠকে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি যাচ্ছেন না বলেই খবর। নবান্নের শীর্ষস্তরের বক্তব্য, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রশাসনকে না জানিয়ে এভাবে একতরফা ভাবে বৈঠক ডাকা যায় না। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে ডাকা এই বৈঠক অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে বড় আঘাত বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল। তাঁদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, রাজ্যের জেলা শাসক পর্যায়ের কোনও অফিসারকে কেন্দ্র এ ভাবে সরাসরি বৈঠকে ডাকতে পারে না। কোন বৈঠকে রাজ্যের কোন অফিসারকে পাঠানো হবে বা হবে না, তা সম্পূর্ণ রাজ্যের এক্তিয়ার। তা স্থির করার অধিকার একমাত্র রাজ্য প্রশাসনের উপর মহলের উপর বর্তায়। তাঁরা আরও জানিয়েছেন সাংবিধানিক মাপকাঠির মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল জিটিএ চুক্তি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও মুখ্য মন্ত্রীর উপস্থিতিতে গঠিত হয়েছিল জিটিএ। পাহাড় সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিএস ডিভিশন এই বিষয়গুলি দেখে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূল ভিতকে অস্বীকার করে তারাই গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে বৈঠক ডাকল।
দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা গোর্খাল্যান্ড নিয়ে মাঝেমধ্যেই সরব হন সংসদে। তাঁর বক্তব্য, পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে খোলা মনে এই বৈঠকে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন বলে আশা করছি। যদিও আমন্ত্রিত তালিকায় তাঁর নাম নেই। নবান্নের শীর্ষস্তর মনে করছে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কিত পাহাড়ের মতো ‘সংবেদনশীল’ ইস্যুতে বৈঠক ডাকার প্রক্রিয়া এবং এই আমন্ত্রণ যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। পাহাড় তৃণমূলের সভাপতি এল বি রাইয়ের কথায়, রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে এই বৈঠকের আমন্ত্রণপত্রেই। অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের ‘গোর্খাল্যান্ড’ ভাবাবেগকে উসকে দিতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (বিনয়পন্থী) নেতা তথা জিটিএ’র চেয়ারম্যান অনীত থাপা এবং মোর্চার মুখপাত্র কেশব পোখরেলের বলেন, এটা বিজেপির রাজনৈতিক চাল। সামনে বিধানসভার ভোট। পাহাড়বাসীর ভোট নিতেই ফের গোর্খাল্যান্ডের কথা বলা হচ্ছে। কেন্দ্রের উদ্দেশ্য যদি পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধানই হয়, তাহলে মোর্চার মূল সংগঠনের সভাপতি বিনয় তামাংকে বৈঠকে ডাকা হল না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। রাজ্যের মন্ত্রী তথা উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতা গৌতম দেবের কথায়, দরকারে বাংলার মানুষ রক্ত দিয়ে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়বে।