এই মুহূর্তে জেলা

২৮৭ তম বর্ষে শেওরাফুলি রাজবাড়ির দুর্গাপূজার বোধন হয়ে গেল ৪২ দিন আগেই।

হুগলি , ১১ সেপ্টেম্বর:- কারণ এই বছর ভাদ্র মাস মলমাস পড়াতে পরের মাস আশ্বিণ কোন শুভ অনুষ্ঠান পূজা হবে না। বাংলা বছরে যে মাসে দুটি অমাবস্যা পরে তাহলে তার পরের মাসটিকে মলমাস বলে। আগামী ১১-০৯-২০২০ (২৫ শে ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ) শুক্রবার , কৃষ্ণনবম্যাদিকল্পারম্ভ বেলা ১২-১০মিঃ, শেওড়াফুলি রাজবাটীতে শ্রী শ্রী সর্বমঙ্গলা মাতার মন্দিরে ২০২০ দুর্গা পূজার বোধনের ঘট্ বসবে। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে অনারম্বর ভাবে বেলায় ঢাকের আওয়াজ, ৪২ দিন ধরে চন্ডীপাঠ ও মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে জানান দেবে দুর্গাপুজো শুরুর। ঐদিন (১১-০৯-২০২০) থেকে শেওড়াফুলি রাজবাটীর এবছরের দুর্গা পুজো শুরু। শেওড়াফুলি রাজবংশর আদি রাজবাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার পাটুলি নারায়ণপুরে, এখন সেই রাজবাড়ি গঙ্গা গহ্বরে চলে গিয়েছে। এনাদের পাঁচটি জেলায় জমিদারি ছিল, বংশ পরম্পরায় এনারা ব্রাহ্মণদের খুব সম্মান করতেন ও খুব প্রজাবৎসল ছিলেন, প্রতিদিন সকালে গরীব পরিবার ও ব্রম্ভনদের ভূমি দান করতেন।

বছরের পর বছর এই ভাবে চলতে চলতে এই বংশ এক সময় নিজেরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। পাটুলির রাজা সাহস্রাক্ষ দত্তর সময় পাটুলীর রাজবাড়ির কুলদেবী ছিলেন “মা মহিষমর্দ্দিনী”, তা প্রায় ৬৫২ বছর এর পূর্বে কষ্টি পাথরের অপূর্ব বিগ্রহ “মা মহিষমর্দিনী “। সেই বিগ্রহও আজও নিয়মিত পূজিত হচ্ছেন শেওড়াফুলিতেই। পুণ্যহৃদয় রাজা মনোহর রায় তাঁর জমিদারির অন্তরভুক্ত বর্ধমান জেলার আঁটিসারা গ্রামে(পরবর্তি সময় এই স্থানটি হুগলি জেলার মধ্যে পরে ) প্রজাদের সুবিধার্থে পুস্করণী খনন করতে লোক পাঠিয়ে ছিলেন, ইতিমধ্যে রাজা স্বপ্নে মা সর্বমঙ্গলা দেবীকে বার বার দেখতে পান। জানান ঐ পুস্করণীর মাটির নিচে চাপা পরে আছেন তাঁকে উদ্ধার করতে।

রাজা মনোহর রায় পরের দিন থেকে প্রচুর লোক পাঠালেন পুস্করণীর চারিদিকে মাটি তুলেফেলতে, ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েছিলে রাজা বার বার পাইকদার পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন কাজ কত দূর এগোলো। সত্যি সত্যি দিন 20 বাদে এক মজদুরের কোদালে উঠে আসে একটি দেবীমূর্তি তার পর সেটাকে পরিষ্কার করা হলে দেখে পিতলের দুর্গা মূর্তি। খবর গেলো পাটুলির রাজা মনোহর রায় এর কাছে , এই খবরটার জন্যে রাজা এতো দিন উদগ্রীব হয়েছিলেন। রাজার কাছে সেই মূর্তি নিয়ে এলে রাজা রাজসভার সদস্যদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দেখেন এটি অষ্টধাতুর দুর্গা বিগ্রহ “মা সর্বমঙ্গলা”! রাজা মনোহর রায় ১১৪১ সালের ১৫ই জৈষ্ঠ ( ১৭৩৪ খ্রিষ্টাব্দ ) শেওড়াফুলি রাজবাটীতে পুণ্য দিনে নানান আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা কে প্রতিষ্ঠা করেন।|

সেই দিন থেকে মা এর নিত্য পূজা, জন্ম তিথি পালন ও দুর্গাপূজা পালিত হয়ে আসছে। এই বছর মা এর দুর্গাপূজা ২৮৭ তম বছর পূজো। মা এর নিত্য সেবা আগে মন মন আতপ চালের নৈবেদ্য নানান ফল মিষ্টান্ন দিয়ে সকালে পূজা হতো কিন্তু এখন দিনকাল বদলেছে অর্থনৈতিক কারণে সেটা কয়েক কেজি চালের নৈবেদ্য হয় কিন্তু পূজার আচার অনুষ্ঠান নিষ্ঠা সহকারে আগের নিয়মেই হয়ে আসছে। আড়ম্বর সরিয়ে রেখে নিষ্ঠা ও প্রাচীন রীতিনীতি মেনে এই পুজো চলে আসছে। আগে রাজবাড়িতে দুর্গা পূজায় মহিষ বলি, ছাগ বলি হতো কিন্তু পরবর্তী কালে শেওড়াফুলি রাজবাটীর বড় তরফ এর পূজায় পশু বলি নিষিদ্ধ বিধানদেন পন্ডিতেরা। তার একটি ইতিহাসও আছে। এখন রীতি নিয়ম মেনে চাল কুমড়ো বলি হয়। বহু মানুষ দূর দূরান্ত থেকে মা কে দর্শন করতে আসেন, ভক্তরা নিজ মনস্কামনা পুণ্যর জন্য মা এর কাছে পূজা দেন ।