সুদীপ দাস,৮ এপ্রিল:- টানা ১৫ দিন ধরে লকডাউনে অর্থ সংকটে পরা সাধারন মানুষদের সেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে চুঁচুড়া আরোগ্যর সদস্যরা। সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ইন্দ্রজিৎ দত্তের ইচ্ছাকে বাস্তবে পরিনত করে চলেছে ৩২জন যুব সদস্য। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাঁরা রেডি হয়ে চলে আসছে চুঁচুড়া কারবালায় আরোগ্যর সদর দপ্তরে। ঘড়ি ধরে সকাল ৮টায় শুরু হয়ে যাচ্ছে খাদ্যসামগ্রী গোছানোর কাজ। এ’কদিনে ৫হাজারের বেশী মানুষের বাড়িতে তাঁরা মোটর বাইক ছুটিয়ে সেইসমস্ত খাদ্যসামগ্রী নিয়ে পৌঁছে গেছেন। সারাদিনে চুঁচুড়া শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে চলেছে আরোগ্যর “রানার”রা। দুখেঃর দিনে শুধুই সুখের বোঝা হাতে ছুটছে তাঁরা। বিরামহীন এই কাজে তাঁদের ক্লান্তি কাটানোর উপশম শুধু খাদ্যদ্রব্য হাতে পাওয়া চোখ ছলছল মানুষগুলির একগাল হাসি। আরোগ্যর রানার তমনাস দাস বলেন আজকের এই লকডাউনের পরিস্থিতিতে যারা চরম সংকটে পরেছেন, পয়সার অভাবে যারা খাবার কিনতে পারছেন না তাঁদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিতে পারলে তো ভালো লাগবেই। ইন্দ্রজিৎবাবু বলেন এমনিতেই সারাবছর চুঁচুড়া আরোগ্য মানুষের সেবায় নিয়োজিত।
তার উপর বর্তমানে চলছে লকডাউন। এ’সময়ে দিনআনা-দিনখাওয়া মানুষগুলি যাতে অনাহারে না থাকে সেকথা চিন্তা করেই আমরা বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যাবস্থা করেছি। এ তো গেলো আরোগ্যর “মানুষ মানুষের জন্য” কর্মকান্ড। লকডাউনের ১৫দিনে আরোগ্য এবার জাতীয় পাখি ময়ুরের আরোগ্য কামনাতেও নামলো। হুগলির রাজহাটে ময়ুর প্রকল্প থাকলেও তা নিয়ে কোন সরকারেরই কোন পরিকল্পনা নেই। এলাকার কল্যা পরিবার সহ হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের দৌলতে আজও সেখানে জাতীয় পাখির অবাধ বিচরন। গ্রামের সেইসমস্ত সাদামাটা মানুষগুলিই ময়ুরের খাবার জোগানের পাশাপাশি রোগব্যাধিতে চিকিৎসার দ্বায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। কিন্তু লকডাউনের বাজারে সেইসমস্ত পরিবারগুলি নিজেদের খাবার যোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে। তাই অভাব দেখা দিয়েছে ময়ুরের খাবারেও। দিন কয়েক ধরে সেই খাবারের জন্য গম খুঁজতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কল্যা পরিবারের সদস্য পেশায় সাংবাদিক বন্ধু উপেন্দ্র নাথ কল্যা। এই খবর পাওয়ার ২৪ঘন্টার মধ্যেই ১০০কেজি গম জোগার করে উপেন্দ্র নাথের হাতে তুলে দিলেন আরোগ্যর পৃষ্ঠপোষক ইন্দ্রজিৎ দত্ত। আরোগ্যর সদর দপ্তরে এসে সেই গম হাতে পেতেই আবেগে ভাসলেন উপেনবাবু। দু’চোখ জলে ভরা উপেনবাবু বলেন ভেবেছিলাম খাবারের অভাবে এবারে হয়তো ময়ুরগুলো মরতে বসবে। কিন্তু আরোগ্য পাখিগুলিকে আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখালো। এবিষয়ে ইন্দ্রজিৎবাবু বলেন আমি ময়ুরগুলির দুরাবস্থার কথা জানতে পেরেই গমের যোগান করেছে। এই গমে যতদিন যাবে যাক, এরপরে লাগলে আবার সাধ্যমত সাহায্য করবো।